Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

অসীমের নামে লিফলেট, সন্দিহান  তৃণমূল

মুখ্যমন্ত্রী অসীমবাবুর প্রশংসা করে তাঁকে কৃষ্ণনগর শহরে নির্বাচনী প্রচার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় দলের অন্দরেই একটা গোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৪২
Share: Save:

খোদ মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনিক ভবনে প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন এবং লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারের গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন। কৃষ্ণনগর পুরসভার সেই প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে লিফলেট বিলি হচ্ছে গোপনে। কে বা কারা এটা করছেন তা এখনও অজানা। তবে রাজনৈতিক মহলে দু’রকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী অসীমবাবুর প্রশংসা করে তাঁকে কৃষ্ণনগর শহরে নির্বাচনী প্রচার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় দলের অন্দরেই একটা গোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। তাঁর শক্তিবৃদ্ধিতে অস্তিত্বের সঙ্কট থেকেই অসীম-বিরোধী ওই গোষ্ঠী তাঁকে বিপদে ফেলতে ওই লিফলেট ছাপিয়েছে। অর্থাৎ এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। এই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়েছে লিফলেটের নীচে ‘তৃণমূল যুব মোর্চা’ লেখা থাকায়। যদিও তৃণমূলের দাবি, যুব মোর্চা বলে তাদের দলে কিছু হয় না। তবুও অন্তর্দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থাকছেই।

অসীমবাবু নিজেই এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যে মন্তব্য করেছেন তা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনাকেই উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেন, “সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাঁরা দলের ভাল চায় না তারাই দলের ক্ষতি করতে এই নীচ কাজ করেছে।” প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিক বার পুরসভা ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের লিফলেট বিলি হয়েছে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জেবের শেখের বিরুদ্ধেও অতীতে এমন লিফলেট বিলি হয়েছে।

দ্বিতীয় একটি কারণও উঠে আসছে। তা হল, বিরোধী দল বিশেষত বিজেপি ভোটের আগে এই কাজ করেছে অসীম তথা তৃণমূলকে বিব্রত করতে। কারণ, অসীমবাবু কৃষ্ণনগরে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রচারের কান্ডারির হেনস্তা হওয়া মানে নির্বাচনী প্রচার ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। এক নেতার কথায়, ‘‘অনেকটা রথের সারথী আহত হলে যোদ্ধার যা অবস্থা হয় সেটাই যাতে মহুয়ার হয় সেই কারণে এটা করেছে বিজেপি।’’ তবে এই দুইয়ের মধ্যে ঘটনা পূর্বাপর মিলিয়ে গোষ্ঠীকলহের বিষয়টিই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যদিও জেলার তৃণমূল সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্তের দাবি, ‘‘যাঁরা মেরুদণ্ডহীন তাঁরা পিছন থেকে এই ধরনের অভিযোগ করেন। অভিযোগ সত্য হলে তাঁরা সামনে থেকে করতেন।’’ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্য, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’

দুই পাতার এই লিফলেট বুধবার রাতে অনেক জায়গায় হাতে-হাতে বিলি হয়েছে আবার অনেকের কাছে ডাকে পৌঁছেছে। অসীমবাবুর বয়ানে ছাপা হয়েছে। সেখানে অসীমবাবু ১৩টি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে এবং পর-পর পয়েন্ট করে সেগুলি লেখা হয়েছে। তার মধ্যে যেমন জল প্রকল্পে ৬৫ লক্ষ টাকা কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তেমনই আছে ডেপে নামে এক সমাজবিরোধীর খুনের ঘটনার উল্লেখ। আছে শঙ্কর সিংহের ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও।

সেখানে ফিরহাদ হাকিম ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি কোটি-কোটি টাকা বিনিময় করেছেন বলে লেখা আছে। শহরে দোকান ঘর তৈরি ও বন্টনের ক্ষেত্রে তিনি আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবাসন প্রকল্প, টোল ট্যাক্স নিয়ে দুর্নীতি, টোটো ইউনিয়নের সভাপতি হয়ে স্টেশন এলাকায় গুন্ডারাজ তৈরি করার মতো অভিযোগের পাশাপাশি পেট্রোল পাম্প, মদের দোকান-সহ বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া এবং ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে তিনটি রিভলবার কিনে রাখার অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। তাঁকে অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গে তুলনা করে “তুফান অনুব্রত” বলে সম্বোধন করা হয়েছে ওই লিফলেটে। বারবার তাঁকে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে।

আপাতত কৃষ্ণনগরে পাড়ার মোড়ে-মোড়ে এই লিফলেট নিয়ে সাধারণ মানুষের জোর আলোচনা চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC Leaflet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE