সংকীর্তনে অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র
প্রার্থীর ঢাউস গাড়ির কনভয় ধুলো উড়িয়ে গ্রাম ছাড়তেই পাঞ্জাবির খুঁটে চশমা মুছে রশিদ মিঞা বলছেন, ‘‘বাবা, ভোট বড় বালাই!’’
ভোটের মুখে হিড়িক পড়ে শিলান্যাসের, আর ভোট ঘোষণার পরে? পালা পার্বনে হাজির হওয়ার!
জালসা থেকে নাম সংকীর্ত্তন— বাদ যাচ্ছে না কিছুই। মানুষের ভক্তিতে মন ছোঁয়াতে নাকি মন বুঝতে প্রশ্নটা তাই থেকেই যাচ্ছে! গাড়ি বাঁত নিয়ে হরিনাম সংকীর্ত্তণের আসরের কাছে দাঁড়াতেই ভিড়টা ভেঙে পড়ল। আর পড়শি গ্রামে পীরের থানে চাদর চড়ালেন তাঁর প্রতিপক্ষ। আসুন এক বার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রটা ঘুরে দেখি— টানা চারবারের সাংসদ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন তাঁর শিষ্য অপূর্ব সরকার। গুরু-শিষ্যের গাঁটছড়া ভাঙতেই, গুরুকে তুলোদোনা করতে কসুর করছেন না তিনি। তবে মিল একটা রয়ে গিয়েছে।
তৃণমূলেরই এক নেতা বলছেন, ‘‘অধীর যেখানেই পা রাখছেন, ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই অপূর্বকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা, যাতে গুরুর প্রচারটা জাঁকিয়ে বসার আগেই শিষ্য কিছু আলো ফেলে আসতে পারেন জনমানসে!’’ ভোটে জেতার পর যাঁদের শহরের বাইরে পা রাখতেই দেখা যায় না বিশেষ তাঁরাই এখন শহর ছেড়ে গ্রামের মেঠোপথ, আল পথ ধরে পরি কি মরি করে ছুটছেন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি চারবারের সাংসদ অধীর মাঝেমধ্যেই নিজের এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। আমন্ত্রণ জানালে কীর্তনের আসর হোক বা কোন ধর্মীয় জালসাতে গিয়ে মান রক্ষা করতে ভোলেন না। কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থীকে কান্দির বাইরে কোথাও যেতে দেখা যায়নি। কিন্তু এ বার প্রার্থী হতেই ছুটোছুটি শুরু হয়েছে। গত শনিবার বিকালে অধীর সালারের পিলখুন্ডি গ্রামে গিয়ে পীর মগদম শাহ মাজার শরিফে গিয়ে চাদর দিয়ে আসেন, পরের দিনই সেখানে হাজির অপূর্ব। মাথায় করে চাদর নিয়ে গিয়ে পীরাস্তানায় চাদর দেওয়ার সঙ্গে এলাকার নেতা কর্মীদের নিয়ে মেলাও ঘুরে দেখলেন তিনি। সপ্তাহখানেক আগে কান্দির বাটীগ্রামে বুড়ো শিব মন্দিরে কীর্তনের আসরে ধর্মীয় কথা বলে সাধারণের সঙ্গে অনেকক্ষণ কাটিয়ে এসেছিলেন অধীর। অধীর বলেন, “আমি ভোটকে সামনে রেখে কোনও কিছুই করি না। যেখানে নিমন্ত্রণ পাই, সেখানেই যাওয়ার চেষ্টা করি।” পাল্টা অপূর্ব বলেন, “সারা বছর উন্নয়নের সাথে সাধারণ মানুষের সাথেই থাকি। সেখানে আমি কোন জাতি ধর্ম দেখি না। কীর্তনের আসরেও যাই আবার ধর্মীয় জালসাতেও হাজির হই।’’
মাজারের পথে অপূর্ব সরকার। —নিজস্ব চিত্র
আর সিপিমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভাবে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত মত। তাঁরা কী করবেন সেটা তাঁরাই ঠিক করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy