Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪
Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রীর ‘ধমক’ই সার! নদিয়ায় ভূমিরাজস্ব দফতরে দালাল চক্রের রমরমা, অভিযোগ স্থানীয়দের

নদিয়া জেলা জুড়ে ভূমিরাজস্ব দফতরের বিভিন্ন ব্লক অফিসে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। যদিও এর বিপরীত চিত্র ধরা পড়েছে বেশ কয়েকটি ব্লকে।

—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নদিয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২২ ২৩:১৬
Share: Save:

কল্যাণী থেকে করিমপুর, নদিয়া জু়ড়ে বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব দফতরের অফিসে সক্রিয় দালাল চক্রের ‘ঘুঘুর বাসা’। এমনই অভিযোগ জেলার বাসিন্দাদের একাংশের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধমকেও’ কাজের কাজ হয়নি বলেও দাবি তাঁদের।

স্থানীয়দের দাবি, জেলায় ভূমিরাজস্ব দফতরের অফিসগুলির সামনের দোকানগুলিতে দালালদের মূল ‘ঠেক’। কত টাকার বিনিময়ে কোন কাজ করা হবে, তা সেখানে বসেই রফা করা হয়। দালালদের সঙ্গে রফা চূড়ান্ত হলে তবেই নাকি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে। করিমপুর ১ ব্লকের সুবীর সাহার দাবি, ‘‘যতই আপনি সঠিক কাগজপত্র নিয়ে যান না কেন, দালাল ছাড়া কাজ করাতে গেলে কোনও না কোনও ভুল ধরে আপনাকে ফেরত পাঠাতেই থাকবে। পয়সা দিলেই সব সমস্যার সমাধান!’’

অথচ পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে ভূমিরাজস্ব আধিকারিকদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ হয়নি, তেমন অভিযোগ করেছেন জেলার বহু বাসিন্দা।

সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মদতেই দালাল চক্রের রমরমা বলে অভিযোগ। চাপড়ার ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বিপ্লব রায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই অসাধু কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। চাপরা ব্লকে ১০০ নম্বর মহৎপুর মৌজার বাঙ্গলঝির বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মিস্ত্রির অভিযোগ ‘‘সরকারি আধিকারিকদের প্রত্যক্ষ মদতে জাল দলিল তৈরি করে এলাকার জমি মাফিয়া সাইফুল শেখ এবং নজরুল শেখ আমার পৈতৃক সম্পত্তির ৩২ শতক নিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে আমাকে কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। বার বার অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে মিলেছে প্রাণনাশের হুমকি।’’ প্রায় একই ধরনের অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লা শেখ, লতিফ মণ্ডল, হরিপদ বিশ্বাস বা তিমির সাহার মতো ভুক্তভোগীদের। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নিজেদের জমি হারিয়েছেন তাঁদের মতো জনা বিশেক বাসিন্দা। প্রত্যেকের অভিযোগের তির ভূমিরাজস্ব আধিকারিক বিপ্লব রায় এবং চাপরা ব্লকের রাজস্ব আধিকারিকের দিকে। প্রায়ই একই অভিযোগ উঠছে তেহট্ট ১, ২ এবং করিমপুর ১ ব্লকের ভূমি রাজস্ব অফিসের আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও।

যদিও এর বিপরীত চিত্র ধরা পড়েছে করিমপুর ২ ব্লকের ভূমিরাজস্ব অফিসে। অশীতিপর বৃদ্ধ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন আগে ভুল করে আমার মাঠের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল। সাত দিন আগে ৫০ টাকা দিয়ে দরখাস্ত করেছিলাম। তার শুনানি ছিল আজ। কাগজপত্র দেখে বিএলআরও সাহেব রেকর্ড সংশোধন করে আমার জমি ফেরত দিলেন। ওই ৫০ টাকা ছাড়া আমার আর কোন খরচই হয়নি।’’

জেলা জুড়ে ভূমিরাজস্ব দফতরের বিভিন্ন ব্লক অফিসে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জেলা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের কয়েকটা অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলির তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE