ভোলাকে খাওয়ানো। নিজস্ব চিত্র
রবিবার সকাল আটটা। ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে দু’ধারের দোকানগুলোতে ভিড় জমতে শুরু করেছে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মোটরবাইক, আবার কেউ সাইকেল নিয়ে বাজারে এসেছেন।
সেখানকার একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন ক্রেতা। হঠাৎ সেই সময় হেলতে-দুলতে সেখানে এসে হাজির হয় ভোলা। তাকে দেখে ছুটে আসে দোকানের মালিক বছর ত্রিশ বয়েসের মৃন্ময় মৈত্র ওরফে টুটু। সেই সময় তাঁর হাতে ছিল কয়েকটি পরোটা। সেগুলো ভোলার মুখের সামনে ধরে টুটু। আয়েস করে একটার পর একটা পরোটা খায় ভোলা। দোকানের ক্রেতারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখতে থাকেন। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আবার হেলতে-দুলতে সে চলে যায় অন্য দোকানে।
একই ভাবে রাস্তার বিপরীত দিকের মুদিখানা দোকানের সামনে হাজির হয় ভোলা। সেই সময়ে ওই দোকানেও কয়েক জন ক্রেতা দাঁড়িয়েছিলেন। ভোলাকে দেখতে পেয়ে ক্রেতাদের ছেড়ে তার কাছে আসেন দোকানের মালিক কৃষ্ণ ভাওয়াল। তাঁর হাতে ছিল কয়েকটি বিস্কুট। একই কায়দায় তিনি বিস্কুট ভোলার মুখের সামনে ধরেন। সেগুলো খাওয়া শেষ করে ভোলা। এ ভাবে রাস্তার ধারের দোকানগুলি ঘোরা হয়ে গেলে বাজারে ভিতরে প্রবেশ করে। সেখানে বিভিন্ন আনাজের দোকানে হানা দেয়। বাজার ঘোরা হয়ে গেলে সে চলে যায় একটু দূরে, শিমুরালি রেল স্টেশনে। ভোলাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন বছর পঁচিশের প্রসদা ভট্টাচার্য। তাঁর হাতে ধরা গোটাকয়েক বিস্কুট। সেগুলো খেয়ে আবার আনমনে হাঁটতে শুরু করে ভোলা।
প্রায় দু’বছর আগে অসুস্থ অবস্থায় শিমুরালি বাজারে এসেছিল এই ষাঁড়। সেই সময় তার পায়ে ছিল ক্ষত। ক্ষত স্থানে মাছি ছেঁকে ধরেছিল। এলাকার দোকানদার এবং স্থানীয় বাসিন্দারাই ষাঁড়টিকে সুস্থ করে তোলেন। সেই থেকে সে এখানেই থেকে গিয়েছে। এলাকার সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘ভোলা’ নামে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস, বিমল পাল, শিশু সর্দার, জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “প্রথম-প্রথম ওর চলন-বলন দেখে ভয় লাগত। অনেকেই ষাঁড়টিকে দেখে ভয়ে ছুটে পালাত। কিন্তু এখন আর ভয় লাগে না। কিছু খেতে দিলে তা খেয়ে ও চলে যায়।” কারও কারও মতে, ভোলা খুব অভিমানীও। টানা দু’চার দিন কেউ কিছু খেতে না দিলে সে আর তার কাছে আসে না।
একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দাড়িয়েছিলেন শিমুরালি ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক লাল্টু পাত্র। তিনি বলেন, “একদিন অসুস্থ অবস্থায় এই বাজারে চলে আসে ষাঁড়টি। কোথা থেকে আসে, তা কেউ বলতে পারবেন না। ওকে এখন অনেকটাই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। এখন বাজারে যে কোনও দোকানের সামনে গিয়ে হাজির হয় ভোলা। সবার আগে তাকে কিছু খেতে দিতে হবে। ক্রেতারা অপেক্ষা করেন। কেউ কোনও প্রতিবাদ করেন না। দেখছেন না, আমি নিজেও দাঁড়িয়ে রয়েছি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy