প্রতীকী ছবি।
হাতে হাত রাখা এবং সেই হাত ছাড়িয়ে তীব্র গালমন্দ করা— রাজনীতির পরিসরে দু’দলের সম্পর্কে নিবিড়তা এবং আকচাআকচির এমন ঘটনা নতুন নয়।
নির্বাচনের আগেই গলায় গলায় সখ্য ভোটপর্ব মিটে গেলেই হাতাহাতি, এমনও দেখা যায় আকছার। তবে, দিল্লি-বিরোধী আবহে রাজ্য রাজনীতির হানাহানির উঠোনে এখন সব বিরোধ ভুলে বিরোধীদের পাশাপাশি দাঁড়ানোর এই ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
সদ্য প্রয়াত দুই বাম নেতার স্মরণসভায় বাম-কংগ্রেস-তৃণমূলের সেই সহবস্থান হারানো ছবিটা ফিরিয়ে দিয়েছে ফের। যা দেখে জেলার এক পুরনো কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘তেতাল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বিরোধীদের এমন গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াতে দেখিনি!’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে জোট হয়েছিল সিপিএম-কংগ্রেসের। লোকসভা ভোটেও তাদের মধ্যে স্পষ্ট সমঝোতা না হলেও, বহরমপুর আসনে বাম নেতারা কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছিলেন। এ বার এনআরসি কিংবা নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী ইস্যুতে সেই ভাতৃত্বে বুঝি যোগ দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও।
সামনে পুর নির্বাচন, কার হাতে কোন দলের হাত থাকবে— তা এখনই স্পষ্ট নয়। বাম-কংগ্রেসের মিত্রতাও দেখা যাবে কি না স্বচ্ছ করেনি কোনও পক্ষই। তবে, রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিজেপিকে রুখতে আপাত সখ্যের একটা ইশারা অবশ্য মিলছে।
সোমবার, বহরমপুরে এফইউসি ময়দানে সিপিএমের প্রয়াত জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য্যের স্মরণসভায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর পাশে বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতেই দেখা গিয়েছিল। ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা সুবোধ দাসও। পরস্পরের মধ্যে যে কথা হয়েছে, তা-ও আন্তরিক ভঙ্গিতেই। মঙ্গলবার, বহরমপু্রের গ্রান্ট হলে আরসপি’র প্রয়াত নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর স্মরণসভার আয়োজন করেছিল তাঁর দল। সেই স্মরণ অনুষ্ঠানে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী সঙ্গেই দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খানকে। তাঁদের পাশেই বসে ছিলেন তাবড় বাম নেতৃত্ব। তবে, ডাক পেয়েও ওই দু’টি অনুষ্ঠানে আসার প্রয়োজন মনে করেনি জেলা বিজেপি নেতারা।
এ দিন স্মরণসভায় অধীর তাঁর বক্তব্য শেষ করতেই মাইকের সামনে এগিয়ে আসেন আবু তাহের। আবুর পিঠে হাত রেখে ছোট ভাইয়ের মতো অধীরকে বলতে শোনা যায়— ‘‘ক্ষিতিদা বড় কাছের মানুষ ছিলেন। পুরসভার নানা কাজে সে সময় উনি প্রভূত সাহায্য করেছেন। আমি স্বীকার করে নিলাম। আজ সে সব কথা বোলো।’’ এমন আন্তরিক সহবস্থান সত্যিই অবাক করেছে রাজনীতি এবং সাধারন মানুষকে।
জেলা রাজনীতির পুরনো মানুষেরা অবশ্য মনে করতে পারছেন— ২০১৭ সালের নভেম্বরে মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৎকালীন জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন মারা যান। এক মাস পরে ডিসেম্বরে জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে বিরোধীরা কেউই আমন্ত্রিত ছিলেন না। তবে মান্নানের মৃত্যুর কয়েকদিন পরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন অধীর। পরের এপ্রিলে শহর কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি অতীশ সিংহের স্মরণসভার আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য বিরোধীদের সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে বাম নেতাদের দেখা গেলেও তৃণমূলের কেউ ছিলেন না।
কিন্তু পরিস্থিতি সবই বদলে দিয়েছে। জেলার এক প্রাক্তন বাম নেতা বলছেন, ‘‘রাজনীতির পরিসরে সবই সম্ভব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy