সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। যুদ্ধটা তা হলে বেধেই গেল! প্রতীকী ছবি
সকাল প্রায় সাড়ে ৭টা। বোমার শব্দে ঘুম ভেঙে বিছানা থেকে জানলার ধারে ছুটে গিয়েছিলেন অরিন্দম। সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। যুদ্ধটা তা হলে বেধেই গেল!
সকলে ছুটছেন এটিএম সেন্টারের দিকে। ততক্ষণে সেখানে স্থানীয়দের লম্বা লাইন। সেই লাইনে দাঁড়িয়েই অরিন্দম প্রথম জানতে পারলেন, তাঁদের শহর ভিনিৎসিয়া থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কলিনিভকায় সেনা ছাউনিতে বোমাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। এত দূর থেকেও শোনা গিয়েছে বোমার শব্দ। যে কোনও সময় এই শহরেও বোমা পড়তে পারে।
আতঙ্কিত সকলেই চাইছেন, যতটা সম্ভব খাবার ও পানীয় জল মজুত করে রাখতে। দোকান-বাজারে কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া থেকে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া অরিন্দম বিশ্বাস আর তাঁর বন্ধুরাও ১২-১৩ দিনের শুকনো খাবার মজুত করে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের বহুতলের নীচে বাঙঅকার করা আছে, প্রয়োজনে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে।
মাজদিয়ার ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা অরিন্দম ভিনিৎসিয়ায় ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভারসিটি’-র চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ২০১৮ সালে পড়তে গিয়েছিলেন। আর তিন ভারতীয় পড়ুয়ার সঙ্গে তিনি একটি বহুতলের একতলা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাঁরাও ডাক্তারির ছাত্র। অরিন্দমের বাড়ি ফেরার কথা ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েছেন।
শুক্রবার ফোনের ওই প্রান্ত থেকে অরিন্দম বলেন, “এই শহর এখনও শান্ত। তবে যে কোনও মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে। সকলেই আতঙ্কিত।” তিনি জানান, সরকারি যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। মাঝে-মধ্যে রাস্তায় ছোট গাড়ির দেখা মিলছে। খুব দরকার না হলে কেউই বাড়ির বাইরে বার হচ্ছেন না। সকলেই বাড়ির বেসমেন্টে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করছেন। অরিন্দম বলছেন, “আমাদের এখানে বেশির ভাগ বাড়ি বা বহুতলে বাঙ্কার আছে। সেটা এ বার কাজে লেগে যাবে মনে হচ্ছে।”
২৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরার জন্য আগেই বিমানের টিকিট কেটে রাখা আছে অরিন্দমের। পরিবারের সবাই চেয়েছিলেন, তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসুন। কিন্তু বন্ধুদের ফেলে একা ফিরতে চাননি তিনি। তার মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে সেটা ভাবতে পারেননি। তাঁর আক্ষেপ, “ভারতীয় দূতবাসও নির্দিষ্ট করে কিছু বলল না। এমন একটা সময় ফিরতে বলল যখন বিমানের টিকিট মিললেও দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা!”
সন্ধ্যার মধ্যে রাজধানী কিভের কাছেই চলে এসেছে রুশ সেনা। যত সময় যাচ্ছে, ততই আতঙ্ক চেপে বসছে শহর জুড়ে। রাস্তা ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ। সকলেই টিভির সামনে বসে। অরিন্দম বলছেন, “নিজেদে শান্ত রাখার চেষ্টা রেখেছি আর অপেক্ষা করছি যুদ্ধ শেষের।”
খুব চিন্তিত চাপড়ার মহেশনগরের শ্রাবণী মল্লিক বা আড়ংসরিষার মনিজা শেখের বাড়ির লোকজনও। কিভ মেডিক্যাল ইউনিভারসিটি-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তাঁরা দু’জনেই। ২০১৯ সালে ভর্তি হলেও কিছু দিন থেকে করোনার কারণে বাড়ি ফিরে অনলাইন ক্লাস করছিলেন। অফলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় দিন দশেক আগে ইউক্রেনে গিয়েছেন। গিয়েই আটকে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁদের হস্টেলের বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মেট্রো রেল স্টেশনে। বৃহস্পতিবার থেকেই নাগাড়ে বোমার শব্দ শুনছেন। শহরের বিমানবন্দরও মিসাইল হানায় তছনছ হয়ে গিয়েছে।
একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে শ্রাবণী, মনিজারা বলছেন, “মিসাইল হানার পর কিভের বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে চাইলেও বাড়ি ফেরার কোন উপায় নেই। তবে কিছু পড়ুয়াকে উদ্ধার করে পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রেও হয়তো তেমন কিছু একটা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy