Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bananas

কলা পেড়ে সালিশির কোপে

প্রশাসন-পুলিশ-পঞ্চায়েত রয়েছে, তবু গ্রামের মাতব্বরদের অনুশাসনে সালিশি যেন সমান্তরাল এক শাসন কায়েম করেছে মুর্শিদাবাদের আনাচ কানাচে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।প্রশাসন-পুলিশ-পঞ্চায়েত রয়েছে, তবু গ্রামের মাতব্বরদের অনুশাসনে সালিশি যেন সমান্তরাল এক শাসন কায়েম করেছে মুর্শিদাবাদের আনাচ কানাচে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৬
Share: Save:

রাস্তার ধারে নানান গাছ গাছালি। কুল-আতা-পেয়ারা-কলা সবই রয়েছে। কেউ কুল পাড়ে কেউ বা পেয়ারা। এতে দোষের কিছু দেখেন না গ্রামের অধিকাংশই। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। গ্রামের এক মহিলা রাস্তার কলা গাছ থেকে সামান্য কয়েকটা কলা কেটেছেন সন্দেহে সালিশিও বসেছিল সে দিন। বছর কয়েক আগের সে সালিশির কথা আজও মনে আছে মাধুরপুকুর গ্রামের। গ্রামের ১১ মোড়ল সে দিন সালিশির নিদান দিয়েছিল—মহিলাকে সিমেন্টের লাইটপোস্টে বেঁধে লাঠিপেটা করার। এখানেই শেষ নয়, প্রকাশ্যেই তাঁর শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ। খবর বেলডাঙা থানায় পৌঁছলে শেষতক ওই এগারো জনকেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ঘটনা গড়ায় জেল হাজত পর্যন্ত। তবে তাতেও হুঁশ ফেরেনি জেলার মোড়ল-মাতব্বরদের।

তাই পরের বছরই নওদার আলমপুরে ফের বসেছিল সালিশি সভা। গ্রামের মধ্যে বড় মন্দির। সেখানে লক্ষ্মীনারায়ণ পুজো হয়। মেলা চলে সপ্তাহখানেক ধরে। এই মন্দিরের উন্নয়নকল্পে জমি চাওয়া হয়েছিল একটি পরিবারের কাছে। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনো সেই পরিবার তাঁদের শেষ সম্বলটুকু দিতে রাজি হয়নি। বিচারে বসে সভা। ওই দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক বয়কট বা গ্রামের ভাষায় ‘একঘরে’ করা হয়। পুজোর প্রসাদ তো দূরস্থান, মন্দিরে গেলে কটু কথা বলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। গ্রামে মুদি, নাপিত, ধোপা বন্ধ হয়। বাড়ির শিশুর জন্য বন্ধ হয় দুধটুকুও। বাইরে থেকে যারা এই বাড়িতে টিউশন পড়াতে আসতেন তাঁদের আসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নওদার কেদারচাঁদপুর এলাকার আরও একটি সালিশির ঘটনা মনে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক যুবকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে ছিলেন এক নাবালিকা। কিন্তু পাত্রের বাবা সে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে নারাজ হননি। উল্টে পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেন। এর পরেই বসে সালিশি সভা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিয়ে যেহেতু হয়নি তাই ওই নাবালিকার সম্মানহানি ঘটেছে। এর জন্য পাত্রের বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করে বসে সালিশি। সেখানে পাত্রের বাবাকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে প্রশাসন সময় মতো হস্তক্ষেপ করায় সে বার অন্তত এই জুলুম থেকে রেহাই
পান তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bananas Kangaroo Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy