Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Dangerous Houses In Nadia

শহরে বিপজ্জনক বাড়ি কত, তথ্য অমিল পুরসভায়

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ায় রাস্তার পাশে রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত একটি বাড়ি। চুন-সুরকির গাঁথুনির বাড়ির এক একটি ইট খসে পড়ে মাঝেমধ্যে।

An image of House

বিপজ্জনক পুরনো বাড়ি। রানাঘাটে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

সুদেব দাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫৪
Share: Save:

মেরেকেটে ফুট ছয়েকের চওড়া রাস্তা। রাস্তার শেষে বহুতল। বহুতলের ঝুল বারান্দা ঘেঁষে রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। আবার ঝুল বারান্দার কিছুটা অংশ বেরিয়ে এসেছে রাস্তার দিকে। রানাঘাট শহর জুড়ে এমন বাড়ির সংখ্যা একাধিক। শুধু তাই নয় শহরের আনাচে-কানাচে রয়েছে একাধিক পরিত্যক্ত ভবন। কলকাতার গার্ডেনরিচে বহুতল ধসে দুর্ঘটনার পর রানাঘাট শহরই বা কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্ন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। আবার শহরে বিপজ্জনক পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা কত সে তথ্যও নেই পুরসভার কাছে। বিষয়টি নিয়ে একযোগে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে নিশানা করেছে বিজেপি ও সিপিএম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ায় রাস্তার পাশে রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত একটি বাড়ি। চুন-সুরকির গাঁথুনির বাড়ির এক একটি ইট খসে পড়ে মাঝেমধ্যে। ঝড়-বৃষ্টির সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পান স্থানীয়েরা। ষষ্ঠীতলা পাড়াতেও রয়েছে পরিত্যক্ত দ্বিতল বাড়ি। আশপাশে রয়েছে একাধিক বহুতল। শহরের সুভাষ অ্যাভিনিউর পাশে থাকা প্রায় শতাব্দি প্রাচীন একটি পরিত্যক্ত বাড়ির একাংশ গত বছর মে মাসে ভেঙে পড়ে। যদিও সেই সময় হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কথা ছিল ওই ঘটনার পর থেকে শহরের পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা কত, তার মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোন বাড়িগুলি রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করবে পুরসভা। প্রায় এক বছর পর সেই তালিকা তৈরি হয়নি বলে সূত্রের খবর।

পুরসভার কর্তৃপক্ষের দাবি, তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলেই বিপজ্জনক পরিত্যক্ত বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ করা হবে। আবার শহরের অলিতেগলিতে একের পর এক বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রেও অনেক সময় নিয়ম মানা হয় না বলে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। সূত্রের খবর, বছর দুই-তিন আগে লকডাউনের সময় শহরের দশটি নির্মীয় ভবনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই সময় খোদ রানাঘাটের মহকুমাশাসক আসরে নেমে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন। পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে চলে টালবাহানা। পরে অবশ্য মোটা টাকার জরিমানাতে সব কিছু 'মিটমাট' হয়ে যায় বলে সূত্রের খবর।

নতুন বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ভাবে মেলে ছাড়পত্র?

পুরসভার বাস্তুকারকদের একাংশের কথায়, নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তার পরেও অভিযোগ এলে পুরসভার তরফে সরজমিনে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের পবিত্রকুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘‘অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রানাঘাট শহরে একের পর এক যে বহু দল নির্মাণ হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সব সময় নিয়ম মানা হয় না। সময়ের অভাবে পুরসভার বাস্তুকারকেরাও সব সময় নজরদারি করতে পারেন না। নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে রাখার কথা, তা-ও রাখা হয় না।’’

সিপিএমের রানাঘাট এরিয়া কমিটির সম্পাদক কমল ঘোষ বলেন, ‘‘অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে রানাঘাট শহরে আমরা আগেও আন্দোলন করেছি। দলের সদস্য কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে অনেক দৌড়ঝাপ করছেন। দুর্ঘটনা ঘটলে কখনই রাজনৈতিক দল দেখে ঘটবে না। সুতরাং এ ব্যাপারে পুরসভাকে সচেতন হওয়া দরকার।’’

রানাঘাটের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে রানাঘাট শহরে কোনও নিয়মই মানা হয় না। কিছু দিন আগে পুরসভার যে কর্মতীর্থ উদ্বোধন হয়েছে, সেখানেও নিয়ম অনুযায়ী রড ব্যবহার হয়নি। তার তথ্য প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’’ যদিও বর্তমান পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি পুরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কোনও অবৈধ নির্মাণ হয়নি। নির্মাণের সময় যখনই অভিযোগ জমা পড়ে, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিপজ্জনক পুরনো বাড়ি চিহ্নিত করে আমরা
নোটিস দিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Old house Nadia Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy