—প্রতীকী ছবি।
নিম ডালের শাসনে চলছে সাপের বিষ নামানোর বুজরুকি। এক শ্রেণির মানুষের অসচেতনতায় হরিহরপাড়ার শ্রীপুর, গজনীপুর এলাকায় রাতের অন্ধকারে চলছে নিম ডালের আঘাত ও মন্ত্র উচ্চারণ করে বিষ নামানোর কারবার। স্থানীয় দের একাংশের দাবি দীর্ঘদিন ধরে এই কারবার চললেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। মাস চারেক আগে সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হতেই কারবারে কিছুটা রাশ টেনেছিল ওঝারা। তবে করোনা আবহে রাতের অন্ধকারে ফের রমরমিয়ে চলছে এই বুজরুকি। অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে এক শ্রেণির অসচেতন মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ওঝাদের বাড়ি। অনেক ক্ষেত্রে ওঝাদের ডাক পড়ছে সর্পদষ্টের বাড়ি।
কেন এমন অবস্থা?
গ্রামের কিছু মানুষ জানান, করোনার মধ্যে ট্রেন সবে চালু হয়েছে, তাও খুব বেশি চলছে না। তার উপরে বাসও তেমন চলছে না। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র যাওয়া একটু হলেও কঠিন। অটো টোটো ভাড়া চাইছে বেশি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে, করোনার ভয়। অনেকেই মনে করছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে রোগীদের সংস্পর্শে এসে তাঁদেরও করোনা হয়ে যাবে। তার বদলে পাশের গ্রামের ওঝার কাছে যাওয়া অনেক সহজ বলে তাদের ধারণা। গ্রামের এক যুবক বলেন, ‘‘সাপে কাটা রোগীকে সকলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চান। সেখানে ট্রেন কম, বাস কম। টোটোর ভাড়া বেশি। তাই ওঝার দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেকে। রোগীকে ভ্যানরিকশা করেই নিয়ে যাওয়া যায় ওঝার কাছে।’’
সন্ধ্যা নামার পর শ্রীপুর গ্রামে গেলে অধিকাংশ দিনই চোখে পড়বে বাড়ির উঠোনে কিম্বা বাঁশ বাগানে চেয়ারে বসানো সর্পদষ্ট রোগী। আর উচ্চস্বরে মনসা গান, মন্ত্র আওড়াচ্ছেন ওস্তাদ। তাঁর সাথে সুরে সুর মেলাচ্ছেন তাঁর সাগরেদরাও। বালতির জলে নিম ডাল ডুবিয়ে সেই ডালের আলতো আঘাত পড়ছে রোগীর গায়ে। কোনও রোগীর ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা, কারও ক্ষেত্রে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা পরে ওঝা বলছেন ‘বিষ নেমে গিয়েছে।’ তারপর তথাকথিত ‘চিকিৎসার’ ব্যয় হিসেবে ওঝার ট্যাঁকে ঢুকে যাচ্ছে গোটা কয়েক একশো, দু’শো টাকার ভাঁজ করা নোট।
গ্রামের বাসিন্দারাও বলছেন,অধিকাংশ দিনই গজনীপুর, মালোপাড়া, চোঁয়া সহ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের, এমনকি পার্শ্ববর্তী নওদা, ডোমকল ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে আসা হয় শ্রীপুর গ্রামে। দু-দিন আগেও গ্রামেরই এক ষাটোর্ধ্ব মহিলাকে সাপে কামড়ায় (মহিলা ও পরিবারের দাবি)। গ্রাম থেকে হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুরত্ব বড় জোর ছ’কিমি। গ্রামের ওঝাদের বাড়ি। ওই মহিলাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝাদের ডাকা হয় বাড়িতে। ঘণ্টা খানেক ধরে চলে বুজরুকি। সর্পদষ্ট ওই মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা গ্রামের ওঝাদের কাছে আসে বিষ ঝাড়তে। তাই আমরাও ডেকেছি।’’ মন্ত্র পড়ে বা নিম ডালের ঘা'য়ের মত বুজরুকিতে সাপের বিষ নামানো সম্ভব নয় একথা মানতে নারাজ অন্ধবিশ্বাসী রোগীর আত্মীয়রা।
গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই সব অন্ধবিশ্বাস মানুষের মনে বসে গিয়েছে। গ্রামে সাপে বিষ নামানোর বুজরুকি নতুন নয়। করোনা আবহে সেটা আরও বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে এই কারবার।’’
হরিহরপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন, ‘‘সাপে কামড়ানোর পর একশো মিনিটের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা শুরু হলে একশো শতাংশ রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। মন্ত্র পড়ে বা ঝাড়ফুঁক করে বিষ নামানোর বিষয়টি বুজরুকি ছাড়া কিছুই নেই।’’
বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য এমনকি পরিবেশ কর্মীরাও বলছেন, ভারতের অধিকাংশ সাপই বিষ-হীন। সেই সমস্ত নির্বিষ সাপে কামড়ানো রোগীদের সারিয়ে তোলার নামে এই কারবার চলছে। বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষধর সাপে কামড়ালে বুজরুকির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা সচেতনতা করছি। ওই গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করব।’’ তবে ওঝাদের বুজরুকির দাপটে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধ্রুব সত্যটাও ফিকে হয়ে পড়ছে। সচেতন ব্যক্তিরাও চাইছেন বুজরুকির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিক প্রশাসন ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy