৩ সন্তান এবং স্বামীর সঙ্গে রেখা কর্মকার। —নিজস্ব চিত্র।
কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে নির্বাচনে বিদ্ধ হয়েছিল তৃণমূল। তাই তৃতীয় বার সরকার গঠনের পর বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। যাবতীয় প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়েছিল রাজ্য সরকারের হাতে। কিন্তু তার ফাঁক গলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এল। তিন সন্তানের মাকে বিবাহযোগ্য কন্যা সাজিয়ে, আবার তাঁর টিপসই নিয়েই সরকারি প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার অন্তর্গত কড়াইয়া গ্রাম থেকে এই দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। গ্রামের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি রেখা কর্মকার জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পে তাঁদের জন্য ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে ২০২০ সালে পুজোর আগে তাঁর আধার কার্ড এবং অন্যান্য নথিপত্র নিয়ে যান গ্রামেরই বাসিন্দা শাদ শেখ এবং রবিউল শেখ নামের দুই যুবক। সেই মতো নথি দিয়ে দেন তিনি। এর পর গত ১৫ জুন ফের এসে বলে, তিনটি কাগজে টিপসই দিতে হবে। তবেই টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। কথা মতো টিপসই দিয়ে দেন তিনি।
রেখাদেবী জানিয়েছেন, পরের দিন সকালেই স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে যান তিনি। ৭০০ টাকা ছিল। তার মধ্যে থেকে ৫০০ টাকা তুলতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা ঢুকেছে। তা থেকে আবার ১০ হাজার টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে। ৩ সন্তানের মা রেখাদেবীর দাবি, ‘‘কী ভাবে টাকা ঢুকল, আবার বেরিয়েও গেল কী ভাবে, কিছুই জানি না। ৩ বছর ধরে ব্যাঙ্কের বইও আপডেট করিনি। ম্যানেজারকে আপডেট করে দিতে বলতে বিষয়টি জানতে পারি। এ নিয়ে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এ বার যা করার, সরকারই করবে।’’
সাগরদিঘি ব্লকের যুগ্ম বিডিও তপন জানা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, কী ভাবে ওই মহিলার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকল, সব জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানিয়েছি। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কী তথ্য হাতে আসে দেখি। তার পর পুলিশকেও জানাব।’’
কিন্তু এ কোনও নতুন ঘটনা নয় বলে দাবি করেছেন উত্তর মুর্শিদাবাদে বিজেপি-র সংখ্যালঘু জেলা সভাপতি বদরুজ্জামান শেখ। তিনি বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। দিদির ভাইয়েরা ১২, আরও প্রাপকরা ১৩। অনেক দিন ধরে এই হিসেবই চলছে। এ রকম বহু ঘটনা রয়েছে। কোনও তদন্ত হয়নি। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির অনেকে এর সঙ্গে জড়িত। গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। আমরা চাই, আসল প্রাপকরা টাকা পান। টাকা যেন নয়ছয় না হয়।’’ তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার মুখপাত্র গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘দলের কেউ ওই কাণ্ডে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে। প্রশাসন তদন্ত করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ওই ঘটনায় কারা যুক্ত।’’
তবে কড়াইয়ার বাসিন্দা আবুল কালামের দাবি, গ্রামের অনেকেই এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘রেখা কর্মকারের ৩ ছেলে মেয়েই বিবাহযোগ্য হয়ে উঠছে। মেয়ে পাওয়ার যোগ্য, মা টাকা নিচ্ছে। এমন অনেকেই রয়েছেন। ভাগাভাগি করে সরকারি প্রকল্পের টাকা নেন। অনেকেই এ ভাবে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু জানাজানি হতে দেন না। প্রশাসনকে বলব, যাঁরা পাওয়ার যোগ্য, তাঁরাই যেন চাকা পান। এখানে যাকে পারছে, তাকে বিবাহযোগ্য সাজিয়ে টাকা নেওয়া চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy