পরিবারের এক জন আর নেই। বেড়ার ঘরে গোঁজা টুথব্রাশ। নিজস্ব চিত্র ।
মৃত কিশোরীর বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সিমেন্টের ঢালাই রাস্তার উপরে রবিবারের মতো মহিলাদের ভিড় নেই। শুধু বাড়ির আশপাশের কয়েক জন প্রতিবেশী ও আত্মীয়া ইতিউতি উঁকিঝুঁকি মারছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখলেই হাওয়া। এক রাতের মধ্যেই যেন গোটা গ্রামের পরিস্থিতি পুরোটাই বদলে গিয়েছে। সকলেই যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। বাড়ির পাশে রাস্তায় আমগাছের ছায়ায় পুলিশ অলস ভঙ্গিতে বসে আছে।
বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য প্রতিনিধিরা আসার পর কিছুটা ভিড় বাড়ে। সেই ভিড় মূলত বিজেপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের। কয়েক জন মহিলা আম গাছের নীচে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারলেও তাঁদের কাউকেই এগিয়ে এসে কথা বলতে দেখা গেল না। সন্দেহ হয়, কোথাও একটা ‘অদৃশ্য চাপ’ কাজ করছে। কিশোরীর এক আত্মীয়া তথা প্রতিবেশী আগের দিন নিজেই ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। কোথায় তিনি? ফোন করতে পরিষ্কার বলে দিলেন, “না বাবা, কিছু বলতে পারব না। অহেতুক সমস্যায় জড়িয়ে যাব। আপনারা যা পাচ্ছেন, তা-ই লিখে দিন।” আর এক প্রতিবেশী আংশুমান বাগচিও বলেন, “ওরা আমাকে বলেছিল বলেই শ্মশানে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” রবিবার ওঁদের কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের চা করেও খাইয়েছেন। সোমবার তাঁদেরই দেখা গেল শুকনো হাসি দিয়ে সরে পড়তে।
আসলে রাজনীতির এক জটিল আবর্তে পাক খাচ্ছে গোটা এলাকা। ২০১৮ সালে এই গ্রাম পঞ্চায়েতটি একতরফা ভাবে দখল করে তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর থেকে পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বিজেপি প্রায় তিন হাজার ভোটের লিড পায়। তার পর এই এলাকায় বিজেপির দাপট অনেকটাই বেড়ে যায়। অনেক তৃণমূল কর্মী ঘরছাড়া হন। অনেকের ঘরবাড়ি ভাঙার অভিযোগ উঠতে থাকে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিধানসভা ভোটেও সেই একই অবস্থা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আবারও এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রায় ১৩০০ ভোটে লিড পায় বিজেপি। কিন্তু রাজ্যে দল আবার ক্ষমতায় আসায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। আবার আস্তে আস্তে নিজেদের পুরনো দাপট ফিরে আসছে।
অনেকেই মনে করেন যে এই এলাকায় বিজেপির ভোট থাকলেও সংগঠন তেমন জোরালো নয়। কয়েক জন কর্মীকে সক্রিয় ভাবে দেখা গেলেও সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়ার মত সংগঠন তাদের সেভাবে তৈরি হয়নি। সমরেন্দু গয়ালির মতো তৃণমূল নেতারা সেই সুযোগটাই নিয়ে আসছেন বলরে অভিযোগ উঠছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্রয় ছাড়া কি সমরেন্দু গয়ালিদের এত দাপট দেখানো সম্ভব? এই বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের প্রহ্লাদ ঘোষ সোজা বলে দেন, “আমাকে এই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন করবেন না।” আর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কৃষ্ণকিঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, “সমরেন্দু কোথায় দাপুটে? এ সবই সংবাদমাধ্যমের তৈরি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy