খোলাবাজারে জলের বোতলে এই ভাবে চলছে অ্যাসিড বিক্রি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
অ্যাসিড-হামলায় ঝলসে যাওয়া লক্ষ্মী আগরওয়াল জীবন কেন্দ্র করে গত বছর ‘ছপাক’ নামে হিন্দি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেই ছবির প্রচারে চলাকালীন ছদ্মবেশে এক দিনে বিভিন্ন দোকান থেকে ২৪ বোতল অ্যাসিড অতি সহজে কিনতে পেরেছিলেন ছবির নায়িকা দীপিকা পাদুকোন।
এই অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর একার নয়। খোলাবাজারে সব ধরনের অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির আট বছর পরেও যে কোনও পাড়ার অধিকাংশ হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে অনায়াসে টাকা দিয়ে কিনে আনা যায় মিউরিয়েটিক অ্যাসিড। মূলত শৌচাগার পরিষ্কারের উপাদান হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়।
দিন কয়েক আগেই নদিয়ার হাঁসখালিতে ঘটে গিয়েছে আরও একটি অ্যাসিড হামলার ঘটনা। হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আক্রান্ত ছাত্রী। তার উপরে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল সোনার দোকানে ব্যবহৃত অ্যাসিড। তবে, অ্যাসিড-আক্রান্তদের অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত স্বাথী চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বহু অ্যাসিড-হামলা হয়ে থাকে মিউরিয়েটিক অ্যাসিড বা শৌচাগার পরিষ্কারের অ্যাসিড দিয়েও। এবং এটি মানুষের চামড়া ও ত্বকে মারাত্মক ক্ষত তৈরি করতে সক্ষম। তাই এই অ্যাসিডও খুল্লমখুল্লা বিক্রি হতে পারে না। কিন্তু হচ্ছে!
সরকারি নিয়মের কোনও তোয়াক্কা না-করে নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে কী ভাবে অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে তার প্রমাণ মিলল রবিবার। আনন্দবাজারের সাংবাদিকেরা এ দিন বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকান ঘুরে পরিচয়পত্র না-দেখিয়ে এবং লগবুকে নাম নথিভুক্ত না করেই কিনে আনতে পারলেন অ্যাসিড। সেই সব বিক্রেতার কাছে অ্যাসিড বিক্রির সরকারি অনুমোদনপত্র আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরাও অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। কেউ-কেউ আবার নীরবতা পালন শ্রেয় মনে করলেন। জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি এ ব্যাপারে বললেন, ‘‘বিষয়টি খোজ নিচ্ছি।’’
তেহট্টের একাধিক হার্ডওয়্যারের দোকানে নামী সংস্থার পানীয় জলের খালি বোতলে অ্যাসিড বিক্রি হতে দেখা গেল। এই রকম বোতল একাধিক কিনেও নিতে পারলেন সাংবাদিক। সেই বোতলে কোন ধরনের অ্যাসিড রয়েছে কেউ জানেন না।
রানাঘাট, চাকদহ, শিমুরালি, মদনপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু হার্ডওয়্যারের দোকানে সালফিউরিক এবং নাইট্রিক—দুই ধরনের অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে দেখা গেল। বোতলের গায়ে অবশ্য কিছু লেখা নেই। মৌখিক ভাবে বিক্রেতা জানালেন। সেই অ্যাসিডের বোতল কাগজে মুড়িয়ে বিক্রি করা হয়। ১৬, ২৫, ৩০, ৪০ টাকার বোতল রয়েছে। দোকানদারেরা জানালেন, কুয়োপাড়, কলপাড়, শৌচাগার, পাইপ ওই অ্যাসিডে ভাল পরিষ্কার হয়। বেশ কয়েক বোতল অ্যাসিড সাংবাদিক সেখান থেকেও বিনা বাধায় কিনে আনতে পারেন।
কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙ্গা এলাকায় একটি দোকানে বাথরুম পরিষ্কারের অ্যাসিড চাইতেই দু’টি বোতল বের করে দিলেন দোকানের এক কর্মী। একটার দাম ২০ টাকা, অন্যটির ৩০ টাকা। জানালেন, বাথরুম পরিষ্কারের অ্যাসিড বিক্রি করার জন্য কাগজপত্র লাগে বলে তাঁর জানা নেই!
কল্যাণীর বিভিন্ন বাজারে মুদিখানা দোকানেও অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে বাথরুম পরিষ্কারের অ্যাসিড। সপ্তপর্নী বাজারের এক দোকানদার বলছেন, ‘‘সরকারি কাগজপত্র নেই বলে কাগজে মুড়ে দিলাম।’’
এখানে অনেক দোকানেই বাথরুম পরিষ্কারের অ্যাসিড পাওয়া যাচ্ছে সাধারণ, লেবেলবিহীন প্লাস্টিকের বোতলে। তার মধ্যে কোন ধরনের অ্যাসিড আছে কেউ জানতে পারছেন না। স্বাতী দেবীর কথায়, ‘‘কোথাও অ্যাসিডের বোতলের উপর ‘টয়লেট ক্লিনার’ এর লেবেল লাগিয়ে আইন ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে যে অ্যাসিড রয়েছে সেটা লেখা হচ্ছে না। আবার কোথাও জলের বোতল বা অন্য বোতলে অ্যাসিড ভরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলের গায়ে কিছুই লেখা থাকছে না। এবং তা কিনতে ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই কোনও নিয়ম মানতে হচ্ছে না এই দুর্ভাগা দেশে।’’
নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy