প্রতীকী ছবি।
নদিয়া জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির ঘরের দেওয়ালে আঁকা ছোটা ভীম, নন্টে-ফন্টে, টম অ্যান্ড জেরির ছবিতে হাত বোলাতে বোলাতে নিজের মনেই হাসছিল বছর দেড়েকের টুকটুকি।
জন্মের পরেই তার মা তাকে তুলে দিয়েছিলেন প্রতিবেশী এক মহিলার হাতে। পুলিশের হাত ঘুরে মা-মেয়ের ঠাঁই হয় শান্তিপুর হাসপাতালে। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে বাড়ি ফেরার অনুমতি মেলে। কেঁদে ফেলে টুকটুকির মা বলেন, “আইনটা আগে জানলে মেয়েকে এ ভাবে কারও হাতে দিতাম না।”
এখন কথা হল, আইন তো জানেন না অনেকে। কখনও অভাবের জেরে, কখনও লোকলজ্জার কারণে বিবাহ-বহির্ভূত সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেন মা। চাওয়া একটাই— আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। কিন্তু চাইলেই তো এ ভাবে দেওয়া যায় না। ফলে পরে হয়রান হতে হয় মা, শিশু, আর যাঁরা তাকে নিলেন, সবাইকেই।
কয়েক মাস আগে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন গিয়ে শোনেন, জন্মানোর পরেই শিশুকে সেখানে ফেলে তলে গিয়েছেন মা। প্রায় দেড় মাস তাকে ওই হাসপাতালেই রাখা হয়েছিল। পরে হোমে পাঠানো হয়।
কান্দি হাসপাতাল থেকে ঠিকানা জোগাড় করে প্রসূতির বাড়িতে যান সিডব্লিউসি-র লোকজন। পরিবারের তরফে বলা হয়— প্রসূতি মানসিক ভারসাম্যহীন। বাড়ি থাকেন না। রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। এটি তৃতীয় সন্তান। আগে এক সন্তানকে হাজার দুয়েক টাকায় খড়গ্রামের শেরপুরের এক নিঃসন্তান দম্পতিকে বিক্রি করেন মহিলার বাবা-মা। ওই দম্পতির নাম-ঠিকানা তাঁরা জানাতে পারেননি।
সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণী এলাকার এক মহিলাও অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে তুলে দিয়েছিলেন ভীমপুরের ভাতজাংলার এক দম্পতির হাতে। পাকা কাজ করছেন ভেবে স্ট্যাম্প পেপারে সইসাবুদও করেন তাঁরা। পরে আবার চাপড়ার অন্য এক দম্পতি সেই শিশুটিকে নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান বলে দাবি করে। থানা-পুলিশ হয়ে শেষে বছর তিনের শিশুটির ঠাঁই হয়েছে করিমপুরের একটি হোমে। এ ক্ষেত্রেও দুই পরিবার দাবি করছে, আইন মেনেই দত্তক নেওয়া হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই শিশুটিকেও বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে হোমে।
সমস্যা হল, কী ভাবে দত্তক নিতে হয়, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার উদ্যোগ প্রশাসনের স্তরে এখনও বিশেষ নেই। এর জন্য যে নির্দিষ্ট আইনমাফিক জেলা জজের কাছে আবেদন করতে হয়, দত্তক যাঁরা নেবেন তাঁদের মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করেই যে আর্জি মঞ্জুর বা খারিজ হতে পারে, সিডব্লিইউসি-র লোকজন যে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সরেজমিন দেখে আসেন, পরিত্যক্ত শিশু খুঁজে পেলে কী ভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানাতে হয়, সে সম্পর্কে কার্যত কোনও ধারণাই নেই সিংহভাগ মানুষের।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy