ফাইল চিত্র
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি। বাড়িতে আট জন মানুষ। বাবা ও মা বিড়ি বেঁধে কোনওমতে এক বেলা খাবার জোগাড় করলেও দ্বিতীয় বেলার খাবার অনিয়মিতই ছিল। তাই ছোটবেলায় গ্রামের ইটভাটায় কাজ করতাম। কখনও ভ্যানরিকশা ঠেলে কিছু পয়সা পেতাম। তাই দিয়ে ভাইদের জন্য খাবার কিনতাম। এইভাবে কাটল ছেলেবেলা। ১৬ বছর বয়সে আমি বিহারের পটনা যাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। সেখানেই থাকতাম। বছরে দু’বার বাড়ি ফিরতাম। এ বারেবাড়ি ফিরেছি লকডাউনে। সাইকেল ঠেলে সুতির ছাবঘাটির বাড়িতে পৌঁছই।
২৩ মার্চের জনতা কার্ফু এত লম্বা হবে বুঝতে পারিনি। ছ’বছরে পটনায় এত জনশূন্য রাস্তা কখনও দেখিনি। পটনার মানুষ এই ক’বছরে আপনজন হয়ে উঠেছিল। লকডাউনে তাঁরা সবাই দুরে সরে গেল মুহূর্তে। কাজ বন্ধ হয়ে গেল। কেউ আর কাজে ডাকে না। যেখানে কাজ করেছিলাম তাঁরা বাকি টাকাও দিল না। এ দিকে বাজারে চাল, আটা আনাজের দাম দিনে দিনে বাড়তে লাগল। ঘরের বাইরে বেরনো যায় না। বাড়ির বাইরে পা দিলেই পুলিশের রক্তচক্ষু। এ দিকে বাড়িতে খাবার নেই। হাতে যা টাকা ছিল তা শেষের পথে। বাড়িতে ফোন করলে মা-বোন কাঁদে আর বাড়ি চলে আসতে বলে। কিন্তু যাব কী করে। আমরা ছ’জন এক সঙ্গে থাকি। আমরা আলোচনা করি সাইকেলে গেলে কেমন হয়!
রওনা দিই এক দিন সাইকেলেই। ছ’জনের মধ্যে চার জন রাজি হল। দু’জন সাইকেলে বাড়ি যেতে পারবে না বলে জানায়। তারা সাইকেল চালাতে জানে না। তাদের ছেড়ে যাব কী করে, তাই ঠিক করি তারা পালা করে চার জনের সাইকেলে আসবে। একদিন গভীর রাতে ছ’জন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রায় ৫০০ কিমি পথ তিন দিনে অতিক্রম করে বাড়ি ফিরলাম। খাবার বলতে মুড়ি আর জল। মুড়ি খেয়ে সাইকেলের প্যাডল যেন ঘুরতে চায় না। এক রাতে গিরিডির কাছে একটু বিশ্রামের জন্য একটি গাছের তলায় বসলাম। সেখানে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, বুঝতে পারেনি। ভোরবেলা ঘুম ভাঙে। তার পর ফের সাইকেল। জনমানবহীন রাস্তা। কোনও ধাবা বা দোকান খোলা নেই যে কিছু কিনে খাব। মাঝে মাঝে পুলিশ তাড়া করলেও মনে হয়েছে এই তো মানুষ! মনে বল পেয়েছি। তারা আমাদের কষ্টের কথা শোনার পর খাবার দিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছে। তিন দিনের পথে মুড়ি ছাড়া পুলিশের দেওয়া চিঁড়ে আর কলা খেয়েছি।
বাড়ি এসে ভাবলাম আর বাইরে কাজে যাব না। নিজের দেশে কাজ করে থেকে যাব। কিন্তু কাজ কোথায়। তাই স্থায়ী ভাবে নিজের গ্রামে থাকতে পারব না। রুজির টানে ফিরে সেই যেতেই হবে আবার পটনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy