Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Horse trading

‘চেনা খেলা’ দেখে চুপ করে আছে মুর্শিদাবাদ

বামেদের দখলে থাকা নবগ্রাম ও জলঙ্গির দুই নির্বাচিত বিধায়কও শুভেন্দুগামী হতে সময় নেননি।

শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিদ্যুৎ মৈত্র 
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

বছর চারেক আগে মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে একটা চালু লব্জ বেশ জায়গা করে নিয়েছিল, উইকেট!

পঞ্চায়েত-পুরসভা ছাড়িয়ে সেই সেই উইকেট পতনের তালিকায় একে একে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিধায়ক-সাংসদেরাও। কংগ্রেসের পাটা পিচে একের পর এক ঘূর্ণি বলে সেই উইকেট তুলে যিনি হুঙ্কার ছেড়েছিলেন— যে দলের টিকিটেই জিতে আসুক শেষতক সেই তৃণমূলই জিতবে! মানেটা খুব স্পষ্ট, যে প্রতীকেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোন না কেন দল ভাঙিয়ে তাঁকে তৃণমূলেই নিয়ে আসবেন তিনি। জেলা কংগ্রেসের পুরনো এক নেতা বলছেন, ‘‘দল ভাঙানোর খেলায় কিছু বল করেছিল বটে শুভেন্দু অধিকারী!’’

২০১৪ সালে মুর্শিদাবাদের দলীয় পর্যবেক্ষক হয়ে আসার পরে কংগ্রেসের পুরনো গড় ভেঙেই ক্ষান্ত হননি শুভেন্দু, বামেদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন হেলায়। শুভেন্দুর দল ছাড়ার পরে সেই উইকেট-পতনের দিনগুলো মনে পড়ছে জেলার বাম-কংগ্রেস নেতাদের।

২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ২২টি আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪টি, আর বামফ্রন্টের ঝুলিতে ছিল চার। কেলাটা শুরু হয়েছিল তার পরে। জেলায় বিরোধীদের হাতে থাকা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি একের পর এক ভেঙে তৃণমূলের ছাতার তলায় নিয়ে এসে জেলাপরিষদ দখল করার পরে কংগ্রেসের হাতে থাকা ১১ জন নির্বাচিত বিধায়কের মধ্যে পাঁচ জনকেই তৃণমূলে নিয়ে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। বামেদের দখলে থাকা নবগ্রাম ও জলঙ্গির দুই নির্বাচিত বিধায়কও শুভেন্দুগামী হতে সময় নেননি। ‘পদ’ এর প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অর্থের লোভ দেখিয়ে শুভেন্দু তাঁদের দলে টেনেছিলেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। শুভেন্দুর দলত্যাগে সেই সব নেতাদের অনেকেই শিবির বদলে ফেললেও দলে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আসন্ন ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর।

২০১১ এবং ২০১৬ দু’বার কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক হয়েছিলেন শাঁওনী সিংহরায়। তার পরেই শুভেন্দুর হাত ধরে তাঁর তৃণমূল যাত্রা ২০১৮ সালে। জেলায় কানাঘুষোয় তাঁর পুনরায় শুভেন্দুপন্থী হওয়ার কথা শোনা গেলেও শাঁওনী অবশ্য এখন বলছেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দলে এসেছিলাম আর কাউকে অনুসরণ করার প্রশ্ন নেই।” তখনও রাজ্যের মন্ত্রীত্বই ছাড়েননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক, সেই সময় প্রকাশ্য সভায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা করে শুভেন্দু অধিকারীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন হরিহরপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক নিয়ামত শেখ। তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে শুভেন্দুর বদান্যতায় দলের তিন নম্বর কার্যকরী সভাপতি হয়েছিলেন নিয়ামত। শুভেন্দুর দলত্যাগের পর তিনি বলছেন, “শুভেন্দুর দল ছেড়ে দেওয়া দুঃখজনক। আমি অবশ্য দল ছাড়ছি না।” কান্দির কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকার শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলে এসেছিলেন ২০১৮ সালে। শুভেন্দু তাঁকে বহরমপুর লোকসভা আসনে প্রার্থীও করেছিলেন। শুভেন্দু দল ছাড়ার পরে তাঁর মুখে কুলুপ।

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “যিনি এত দিন কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলের জন্ম দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলায়। সেই শুভেন্দু হয়ত তৃণমূল ভাঙিয়ে অন্য দলের শক্তি বৃদ্ধি করবে। এ তো চেনা খেলা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Horse trading Murshidabad TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE