Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪

ভাঙনের গ্রাসে স্বজনহারা আশ্রম

একে একে বেহাত হয়ে গিয়েছিল আশ্রমের লাগোয়া জমি। মাস কয়েক হল, হাত পড়েছে আশ্রমের খোলা মাঠেও। চাকদহ শিমুরালির ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের ছিন্নমূল মেয়েরা তাঁদের শেষ ঠাঁইটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

একে একে বেহাত হয়ে গিয়েছিল আশ্রমের লাগোয়া জমি। মাস কয়েক হল, হাত পড়েছে আশ্রমের খোলা মাঠেও। চাকদহ শিমুরালির ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের ছিন্নমূল মেয়েরা তাঁদের শেষ ঠাঁইটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সাড়া মিলেছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ককেও বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছেন মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। সেই ভাগীরথী শিল্পাশ্রমে পা রাখল আনন্দবাজার—

১৯৪২ সাল। আর এক বছর পর যে ৫০-এর মন্বন্তর আসছে, সময়ের গায়ে তার ছাপ স্পষ্ট। দিশেহারা সেই সময়ে কেউ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন, কারওবা মৃত্যু হচ্ছে অনাহারে। সেই বছরই সেনা বাহিনীর চাকরি ছাড়লেন চাকদহের বাসিন্দা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল দ্বিজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

সহায়সম্বলহীন আটপৌরে মেয়েদের দুর্দশা তাঁকে অস্থির করে তুলেছিল। চাকদহ শহর লাগোয়া শিমুরালিতে স্বজনহারা মেয়েদের জন্য একটি আশ্রম তৈরি করেছিলেন তিনি। প্রায় ৩০ একর জমিতে তৈরি সেই আশ্রমের নাম শিল্পাশ্রম। সেখানে ছিল চাষের জমি, ফলের বাগান, পুকুর। মেয়েরা যাতে হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বি হতে পারেন, ব্যবস্থা হয়েছিল তারও।

প্রায় শুরুর দিন থেকে সেই আশ্রমে রয়েছেন প্রেম বাহাদুর লামা। অশিতিপর এই বৃদ্ধ আশ্রমের সবার প্রেমাদা। দশ বছর বয়সে কার্সিয়াং থেকে তাঁকে আশ্রমে নিয়ে এসেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ। আশ্রমের প্রতিটি ওঠাপড়ার সাক্ষী এই নেপালি বৃদ্ধ। তিনি জানান, আশ্রমের সামনে থেকে দু’বছরের এক কন্যা সন্তানকে কুড়িয়ে পান দ্বিজেন্দ্রনাথ। তাঁকে দত্তক নেন তিনি। নাম দেন ভাগীরথী। তবে তার সাল-তারিখ মনে নেই প্রেম বাহাদুরের। পালিতা কন্যার নামেই আশ্রমের নতুন নামকরণ করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ— ভাগীরথী শিল্পাশ্রম।

প্রশাসনিক তথ্য বলছে, ভিতরের ৩০ একর ছাড়াও বাইরে প্রচুর জমি ছিল আশ্রমের নামে। সেই জমির পরিমাণ ১৮৭ শতক। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আশ্রমের ভিতরের জমিতে সব্জি চাষ হত। আর বাইরের জমিতে ধান-গম-আলু।’’ একটি ভাঙা ঘরের দিকে হাত তুলে বললেন তিনি, ‘‘ওই যে দেখছেন, ওই ঘরে ছিল ধান-গম ভাঙা মেসিন। বাইরে থেকে তেল-মসলা ছাড়া আর কিছু কিনতে হত না। সে ছিল এক সোনার সংসার।’’

স্বাধীনতার পর সারা দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও একদিন শান্ত হয়। বদলায় আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। ধীরে ধীরে প্রয়োজন ফুরোয় স্বজনহারাদের আশ্রমের। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের শেষে আশ্রম বদলে যায় অনাথ আশ্রমে। মূলত অনাথ বালিকা-কিশোরীদের এখানে রাখা হত। কল্যাণীর এসডিও স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘আশ্রম যখন তৈরি হয়েছিল, তখন ‘সোসাইটি অ্যাক্ট’ তৈরি হয়নি। ফলে সরকারের খাতায় আশ্রমের নাম নথিভূক্ত হয়েছিল ‘কোম্পানি অ্যাক্ট’-এ। আবাসিকদের অভিযোগ, সেই আইনকে হাতিয়ার করে বর্তমানে একের পর এক জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CM Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE