Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
society

পাবজির ভূত ঘাড় থেকে নামায় স্বস্তি

পাবজির ভক্ত বছর পঁচিশের কৌশিক দাস যেমন বলছেন, “মনটা খুব খারাপ। গেম খেলছি না বলে ঘুম এল না। একটা অস্বস্তি কাজ করছে। মনে হচ্ছে, সময় যেন থমকে গিয়েছে। কারও কথাই সহ্য হচ্ছে না।”

প্রতীকী চিত্র। ছবি: টুইটার

প্রতীকী চিত্র। ছবি: টুইটার

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

কানে হেড ফোন, হাতে মোবাইল। মাঝরাতে ছেলে চিৎকার করে উঠছে-“আরে আমায় বাঁচা। রিভাইভ কর, রিভাইভ কর!
প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতেন নমিতা সরকার। পরে বুঝলেন, ছেলে পাবজি গেমের নেশায় বুঁদ। এলোপাথাড়ি গোলাগুলি চালিয়ে মানুষ মারার অদ্ভুত এক খেলা, যাতে প্রায় গোটা দুনিয়া ডুবে ছিল। অবশেষে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার সেই ‘পাবজি’ নিষিদ্ধ করেছে বুধবার থেকে। তাতে উচ্ছ্বসিত অভিভাবকেরা। এত দিনে বুঝি ছেলেমেয়েদের ঘাড় থেকে গেমের ভূত নামবে।
নমিতাদেবী বলছেন, “খুব ভাল সিদ্ধান্ত। বসে-বসে গেম খেলে ছেলের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। অসামাজিক হয়ে যাচ্ছিল। মানুষ খুন করা কোনও খেলা হতে পারে! এটা একটা ভয়ঙ্কর নেশা। পরিবার, বন্ধুবান্ধবের কোনও খেয়াল নেই। আড্ডা নেই। শুধু মোবাইলে মুখ গুঁজে আছে। এত দিনে সরকার কাজের কাজ করল।’’
এক দম্পতি জানতে পেরেছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে ফাঁকি দিয়ে ছেলে রাত জেগে পাবজি খেলে। বাড়িতে ওয়াইফাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রথম-প্রথম বিদ্রোহ করেছিল ছেলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল। দুর্ব্যবহার করত। মন খারাপ করে বসে থাকত। এ ভাবে বেশ কিছু সময় অবসাদে কাটানোর পর আস্তে-আস্তে ঠিক হয়ে যায়। ছাত্রটির মা বলেন, “অনেক কষ্টে ছেলেকে ওই গেমের নেশা থেকে ছাড়াতে পেরেছিলাম। এ বার পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলাম।”
এক মনবিদের কথায়, “পাবজির নেশায় দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যেতে বসেছিল এমন কেসও পেয়েছি। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। ছেলেটা এতটাই এই গেমের নেশায় ডুবে গিয়েছিল যে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই খেলতে বলে যেত। মাঝ রাত পর্যন্ত তা চলত। স্ত্রীর সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না।’’
পাবজির ভক্ত বছর পঁচিশের কৌশিক দাস যেমন বলছেন, “মনটা খুব খারাপ। গেম খেলছি না বলে ঘুম এল না। একটা অস্বস্তি কাজ করছে। মনে হচ্ছে, সময় যেন থমকে গিয়েছে। কারও কথাই সহ্য হচ্ছে না।” মনবিদ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী বলছেন, “এই সব ভার্চুয়াল গেমে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়, আনন্দ পায়। যাকে বলে ‘রিওয়ার্ড সার্কেল’। কিন্তু তাতে একটা সময় ভয়ঙ্কর আশক্তি তৈরি হয়ে যায়। একেবারে নেশার মতো।” তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ খেলা বন্ধ করে দিলে অনেকটা উইথড্রয়াল সিন্ড্রোমের মতো হতে পারে। তাই এই সময় পরিবারের উচিৎ ভুক্তভোগীদের পাশে থাকা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Society Civic Issues PUBG
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy