এই সেই কুপন, যা দিয়ে ‘চাঁদা’ তোলা হয়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
শাসক দলের নেতাকে ‘তোলা’ দিলে তবেই মেলে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার গুদামে ঢোকার অনুমতি। গুদামের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে নেতার লোকজন। প্রতিটি ট্রাক এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। চালকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ‘কুপন’। বিনিময়ে তাদের হাতে দাবি মত টাকা দিতে হয়। অনেকটা গেট পাসের মতো।
লরির মালিক থেকে শুরু করে চালক-খালাসিরা এটা ‘তোলা’ বলে দাবি করলেও নেতা মানতে নারাজ। তাঁর কথায় তোলা নয়, ‘তোলা’ নয়, আসলে শ্রমিকদের স্বার্থে ‘চাঁদা’ তোলা হচ্ছে। তবে বিষয়টি দলেরই অনেকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তবে তাতে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। আইএনটিটিএইসি-র নামে ‘কুপন’ ছাপিয়ে প্রতি দিন হাজার হাজার টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে ভাতজাংলা অঞ্চল সভাপতি খোকন মণ্ডলের ভাই দিলীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। দিলীপ নিজেই আইএনটিটিইউসি নেতা। কয়েক দিন আগেও তিনি এফসিআই ইউনিটের সম্পাদক ছিলেন। মাল বহনের জন্য লরির মালিকদের উপর কে ছড়ি ঘোরাবে তা নিয়ে শাকদলের অভ্যন্তরে বিবাদ প্রবল আকার নেওয়ার পরেই সংগঠনের নামে ‘কুপন’ ছাপিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
দলের ভিতরে সমালোচনার মুখে পড়ে আইএনটিটিইউসি-র নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শশাঙ্কশেখর ঘোষ চৌধুরী কোতোয়ালি থানায় সরাসরি দিলীপ মণ্ডলের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। শশাঙ্কের দাবি, “যতই আমাদের সংগঠনের নামে কুপন ছাপিয়ে টাকা তুলুক না কেন, দিলীপ মণ্ডল আমাদের কেউ না। আমরা কমিটি ভেঙে দিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, ওর বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ পর্যন্ত করা হয়েছে।”
শশাঙ্কের এই ‘আইনানুগ পদক্ষেপ’ করার দাবিকে অনেকেই আমল দিতে নারাজ। তাঁদের কথায়, জেলা নেতৃত্ব চাইলে সাংগঠনিক ভাবেই অনেক কিছু করতে পারেন। দল চাইলে কারও তোলাবাজি বন্ধ করতে পারে না, এটা হতে পারে না। দলেরই একাংশের অভিযোগ, অঞ্চল সভাপতি তাঁর দাদা হওয়ায় দিলীপ এতটাই বলিয়ান যে কেউই কিছু করতে পারছে না। এমনকি স্থানীয় কিছু সমাজবিরোধীকে সঙ্গে নিয়ে লরি মালিকদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিরোধিতা করলে মাঝে-মধ্যে মারধর দেওয়া হয়। দিন তিনেক আগে তোলা দিতে অস্বীকার করায় লোকজন নিয়ে এসে সুরাব শেখ নামে এক লরি মালিককে এফসিআই গুদামের সামনে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ ওঠে দিলীপের বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে শনিবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন গুদামের শ্রমিক ও লরি শ্রমিকেরা। কিন্তু তার পরেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফু়ড কর্পোরেশনের মাল বহন করার জন্য প্রতি দিন আড়াইশো থেকে তিনশো লরি লাগে। স্থানীয় ন’টি ট্রান্সপোর্ট সংস্থা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেয়। তার মধ্যে একটির মালিক দিলীপ মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গীরা। সামনে না থাকলেও এই ট্রান্সপোর্ট সংস্থার মাধ্যমে অঞ্চল সভাপতি খোকন মণ্ডলেরও একাধিক লরি খাটে বলে সূত্রের খবর। লরি মালিকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, ওঁরাই ঠিক করে দেন, কোন দিন কে কতগুলি লরি দেবে। প্রতিদিন মোট লরির ৪০ শতাংশ ওঁরাই দিচ্ছেন। বাকিটা অন্যেরা দেবে।
গুরুতর জখম অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ভর্তি লরি মালিক সুরাব শেখ বলেন, “কত দিন এই অত্যাচার সহ্য করা যায়? আমরাও তো লরির মালিক, আমরাও তো তৃণমূল দলটা করি। তা হলে ওরা কেন সবটা নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী ঠিক করে দেবে? কেন ওদের প্রতি দিন লরি পিছু দশ টাকা করে দিতে হবে? আমি তোলা দিতে আপত্তি করায় আমাকে এ ভাবে মারধর করা হল।” তাঁর অভিযোগ, “খোকন মণ্ডল দলের অঞ্চল সভাপতি হওয়ায় সেই জোরেই ওদের এত বাড়বাড়ন্ত।”
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে খোকন মণ্ডলের দাবি, “আমার দুটো লরি খাটে বটে, তবে আমি ও সবের মধ্যে নেই। আমার ভাইও কোনও গন্ডগোলের মধ্যে থাকে না। ওকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে সদ্য বিজেপি থেকে আসা লোকজন।” একই বক্তব্য দিলীপেরও। তাঁ দাবি, “আমি কোনও অশান্তির মধ্যে থাকি না। সংগঠন থেকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে লরির চালক ও খালাসিদের জন্য একটা তহবিল করা হবে, যাতে দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, পরিবারের পাশে থাকা যায়।”
কিন্তু সংগঠনের নামে কোন তহবিল তৈরি হলে তার তো হিসাব থাকবে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকবে? সে সব আছে? দিলীপ বলেন, “তিন জনের নামে একটা অ্যাকাউন্ট খোলার কথা হয়েছিল। সময়ের অভাবে সেটা হয়ে ওঠেনি।” এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের মতে, “এটা লরি মালিকদের নিজস্ব বিষয়। তাঁরাই নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে যা করার করেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy