থানার সামনে আনারুল অনুগামীদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে আকচাআকচি নতুন নয়। কটূক্তি-বচসা-হাতাহাতির অভিযোগ কম নেই। এ বার সেই তালিকায় উঠে এল অপহরণের নালিশ।
মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ এলাকার তৃণমূলের জেলা পরিষদ (স্বাস্থ্য) কর্মাধ্যক্ষের দুই নাবালক স্কুল পড়ুয়া পুত্রকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই স্থানীয় বিধায়কের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে ওই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল শমসেরগঞ্জ। চলল দফায় দফায় বিক্ষোভ, অবস্থান, থানা ঘেরাও।
শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের মদতেই তাঁর অনুগামী দুষ্কৃতীরা কর্মাধ্যক্ষ আনারুল হকের দুই ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা করেছে— এই অভিযোগে এ দিন সকাল থেকে শমসেরগঞ্জ থানা অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন আনারুল এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। ওই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বিক্ষোভ সামলাতে তড়িঘড়ি আনারুলের লিখিত অভিযোগ মতো ১৭ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করে পুলিশ। পুলিশি তৎপরতার আশ্বাস পেয়ে দুপুরের দিকে অবরোধ উঠলেও শমসেরগঞ্জ জুড়ে উত্তেজনা কমেনি। আমিরুলের নাম না করেলেও জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “এটা স্থানীয় বিধায়কের মদতেই হয়েছে। সে ছাড়া আর কারও এত সাহস নেই যে শমসেরগঞ্জে আমার ছেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। পুলিশের উপর আমরা আস্থা রাখছি। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক তারা। আমাদের লোকেরা যদি আইন হাতে তুলে নিতে না হয়, পুলিশ তা নিশ্চয় মনে রাখবে!’’
আমিরুল ইসলাম এখন কলকাতায়। সেখান থেকেই ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিডন্যাপার নই। আমার সঙ্গে কোনও অপহরণকারীর যোগাযোগও নেই। আমার বদনাম করার জন্য এবং দলটাকে শেষ করার জন্যই এ সব অভিযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এটা একটা চক্রান্ত।’’
বিধায়কের দাবি, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, অপহরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তাঁর কথায়, ‘‘নিতান্তই নাটক, সব ভিত্তিহীন গল্প।” এ ব্যাপারে জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী শুধু বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে।’’ তবে ওই ঘটনায় য়ে দলের মুখ পুড়েছে তা মেনে নিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খানের কথাতেও তা স্পষ্ট, “আমিরুলের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যে অভিযোগ করার মানে হয় না। এটুকু বলতে পারি, যা হচ্ছে, ভাল হচ্ছে না।”
আমিরুল-আনারুল বিবাদ দীর্ঘদিনের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে তা ফের প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিকবার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাল হয়েছে শমসেরগঞ্জ। এ দিন, শমসেরগঞ্জের দেবীদাসপুর গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতি দিনের মতো আনারুলের দুই ছেলেকে মোটরবাইকে চড়িয়ে তাঁরই এক কর্মী আরসাদ আলি স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়াদের বয়স ১৫ এবং ১১ বছর।
অভিযোগ, সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে স্কুলের কাছেই মোটরবাইকের পথ আটকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। আনারুলের অভিযোগ, দুই ছেলেকে বাইক থেকে পিস্তল ও বোমা দেখিয়ে নামিয়ে দুষ্কৃতীরা গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেদের শাসানো হয়, ‘তোদের বাবার কাছে ১০ লক্ষ টাকা না পেলে তোদের ছাড়ব না!” দুই ছেলেই কান্না জুড়ে দেয়। এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ। তাদের কান্না দেখে লোকজন ছুটে আসে। বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে পালায়।
ঘটনার সময় নিজের জমি থেকে ফিরছিলেন বদরুল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘এক যুবকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলছিল বাচ্চা দু’টির। লোকজন ছুটে আসতেই গাড়ি নিয়ে ওই যুবকেরা পালায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy