Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘জাঁক দেব কোথায়?’

গত বছর মুর্শিদাবাদে যেখানে ১ লক্ষ ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এ বারে পাট চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার হেক্টর জমিতে। পাটের দাম না পাওয়ার কারণে কিছুটা হলেও জেলার অর্থকরী ফসল চাষ থেকে পিছু হটছেন চাষিরা।

পাট কাটছেন চাষিরা। —ফাইল চিত্র

পাট কাটছেন চাষিরা। —ফাইল চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৫
Share: Save:

জমির পাট দাঁড়িয়ে আছে জমিতেই। সেই পাট মাঠ থেকে কেটে জাঁক দিয়ে ঘরে তোলার যা খরচ তাতে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি হয়ে যাবে। অতএব খেতেই পড়ে রইল পাট। গত বছরের সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। তা নিয়ে চাষি কি কোথাও কোনও অভিযোগ জানিয়েছিল? কোনও আন্দোলন করেছিল?

পাট চাষিরা বলছেন, ‘‘কোথায় জানাব? জানিয়ে কী হবে? আমাদের কথা কে শুনবে!’’ ডোমকলের হিতানপুরের বেশ কয়েকজন চাষি গত বছর দাম কম থাকায় পাট না কেটে খেতে গরু, ছাগল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এ বারের ছবিটা কেমন?

গত বছর মুর্শিদাবাদে যেখানে ১ লক্ষ ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এ বারে পাট চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার হেক্টর জমিতে। পাটের দাম না পাওয়ার কারণে কিছুটা হলেও জেলার অর্থকরী ফসল চাষ থেকে পিছু হটছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের গড় বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা প্রায় ৫৯৮ মিলিমিটার। কিন্তু সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৮২ মিলিমিটার। প্রায় ১৯ শতাংশ বৃষ্টিপাতের এখনও ঘাটতি রয়েছে। খাল, বিল, নয়ানজুলিতে সামান্য যেটুকু জল জমেছে সেখানে পাট জাঁক দেওয়া বেশ সমস্যার হবে। ইতিমধ্যে রোগপোকার আক্রমণে যে সব জমির পাট মরতে শুরু করেছে, সেই সব জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু পাট কেটে কী ভাবে, কোথায় জাঁক দেওয়া হবে তা এখনও বুঝতে পারছেন না চাষিরা। অথচ প্রত্যেক চাষি জানেন পাটের দাম নির্ভর করবে পাট জাঁক দেওয়ার উপরে। পাট ভাল করে জাঁক না দেওয়া হলে তার রং ভাল হবে না। আর রং ভাল না হলে বাজারে পাটের দামও ভাল পাওয়া যাবে না।

ডোমকলের পাটচাষি নান্টু মণ্ডল বলছেন, ‘‘আবহাওয়া ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। এ বারে বৃষ্টির অভাবে পাট চাষ খারাপ হয়েছে। পাটের উৎপাদনও কমবে। তার উপরে এখনও বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় পাট পচানো নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জমিতে পাট বোনার সময় থেকে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। সে সময় অনেকেই জলসেচ দিয়ে পাটের বীজ বুনেছেন। পাট বড় হওয়ার পরেও বৃষ্টির অভাবে কোথাও কোথাও পাটের জমিতে জলসেচও দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাটে নানা রোগপোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।

চাষিরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির ঘাটতির কারণে পাটের পাতা পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। পাটের পাতা ও ডগায় লাল মাকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। পোকায় পাটের শিকড় কেটে দিচ্ছে। যার জেরে পাট মাঠেই মারা যাচ্ছে। ফলে এ বারে পাটের তন্তুর গুণগতমান এবং উৎপাদন ব্যাহত হবে। ডোমকলের হিতানপুরের চাষি সেকেন্দার শেখ বলছেন, ‘‘বিঘার পর বিঘা জমিতে পোকা লেগেছে। পোকায় পাটের পাতা খেয়ে গাছ শীর্ণ করে দিয়েছে। ফলে পাটের উৎপাদন খুবই খারাপ হবে।’’

কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর থেকে পাটের দাম নেই বললে চলে। তার উপরে চাষের খরচ বেড়েই চলেছে। এ বারে বৃষ্টির অভাব ও পোকার আক্রমণে পাট চাষে ক্ষতিও হয়েছে। ডোমকলের বঘারপুর-রমনার চাষি হাসিবুল শেখ বলেন, ‘‘বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে পাট চাষের ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে বৃষ্টি না হলে পাট জাঁক কোথায় দেব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’’

মুর্শিদাবাদের উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু। তিনি বলছেন, ‘‘এ বছর জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির তুলনায় ঘাটতি অনেকটাই ছিল। কিন্তু জুলাই মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যার জেরে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি অনেকটাই কমেছে। ফলে সব ফসলে উপকার হচ্ছে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলছেন, ‘‘বৃষ্টির ঘাটতির কারণে পাট চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Berhampur Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy