Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ধানে ‘বাটা’, ক্ষুব্ধ চাষিরা, অভিযোগ প্রশাসনে

রবিবার ধান কেনা নিয়ে জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে ‘বাটা’র প্রসঙ্গ তুলেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। জেলাশাসক পি উলাগানাথনও বলেন, ‘‘২০ শতাংশ পর্যন্ত বাটা নেওয়া হচ্ছে বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

ফড়েতে রক্ষা নেই, দোসর ‘বাটা’। চাষিরা জানাচ্ছেন, সহায়ক মূল্যে কেনার সময় যে পরিমাণ ধান বাদ দেওয়া হয় সেটাই হল ‘বাটা’। চাষিদের অভিযোগ, কোনও কিছুর পরোয়া না করে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত ‘বাটা’ নেওয়া হচ্ছে। কোনও চাষি এক কুইন্টাল ধান বিক্রি করছেন। তাঁর ধানের যদি ২০ শতাংশ ‘বাটা’ হয়, তবে তাঁর ধানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ কিলোগ্রাম।

রবিবার ধান কেনা নিয়ে জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে ‘বাটা’র প্রসঙ্গ তুলেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। জেলাশাসক পি উলাগানাথনও বলেন, ‘‘২০ শতাংশ পর্যন্ত বাটা নেওয়া হচ্ছে বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। কোনও ভাবেই এটা মেনে নেওয়া যাবে না। চাষিকে এ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।’’ অন্য দিকে, ধান কেনা নিয়ে বৈঠকের পরে সোমবার বহরমপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কিসান মান্ডির ছবিটা কিছুটা হলেও বদলেছে। এ দিন পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীদের মান্ডিতে গিয়ে খোঁজ নিতে দেখা গিয়েছে।

চালকল মালিকদের দাবি, ফেয়ার অ্যাভারেজ কোয়ালিটি (এফএকিউ) ধান কেনার কথা। সরকারও এফএকিউ ধান অনুযায়ী এক কুইন্টাল ধানে ৬৮ কেজি চাল নেয়। কিন্তু অনেক সময় চাষিরা নিম্নমানের ধান নিয়ে আসছে। ওই ধানে কুইন্টালে ৬৮ কেজি হারে চাল হবে না। অথচ তাঁদের কাছ থেকে সরকার এক কুইন্টাল ধানে ৬৮ কেজি চাল নেবে। তাই ধানে ‘বাটা’ নিতে হয়।

মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ সাহা বলেন, ‘‘২০শতাংশ বাটা নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ধানে স্যাঁতসেঁতে ভাব বেশি থাকলে এবং ধুলো, নোংরা থাকলে ৬-৭ শতাংশ বাটা নেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, সরকার আমাদের কাছ থেকে মান দেখে চাল নেয়, আমরাও মান দেখে ধান না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হব।

রবিবারের বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন থেকে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার ধানের ‘বাটা’ ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন। কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাটা নেওয়া হচ্ছে। সেটাই রবিবারের বৈঠকে তুলে ধরেছি।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল রবিবারের বৈঠকে চালকল মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাটা নিয়ে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। ধানের মান খারাপ হলে ৪-৫ শতাংশের বেশি যেন বাটা না নেওয়া হয়।’’ এ দিন সভাধিপতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘নিম্ন মানের ধান হলে ৪-৫ শতাংশের বেশি ‘বাটা’ নিলে চালকল মালিক থেকে শুরু করে যাঁরা ওই ঘটনায় যুক্ত থাকবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বৃহস্পতিবার বহরমপুরের ভোল্লা থেকে আবুল কাশেম শেখ ভাকুড়ির কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘সে দিন ১২ কুইন্টাল ৩৫ কেজি ধান হয়েছিল। ১১১ কেজি বাদ দিয়ে ১১ কুইন্টাল ২৪ কেজির দাম দেবে বলে ধান কেনার সাথে যুক্ত আধিকারিকরা জানিয়েছেন। আমার ধান কুইন্টালে ১০ কেজি করে বাদ দেবে বলেছিল। অনেক অনুরোধ করার পর তাঁরা ৯ কেজি করে বাদ দিয়ে ধান নিয়েছেন।’’ এ ভাবেই চাষিরা চাষিরা ‘বাটা’ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ দিন বহরমপুরের ভোল্লা গ্রামের মনিরুজ্জামান শেখ বহরমপুরে কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘ এ দিনও কুইন্টাল পিছু ৫-৭ কেজি পর্যন্ত বাটা নিয়েছে।’’ সন্ধিপুরের চাষি ইয়াসিন শেখ বলেন, ‘‘আমার ধান খুবই ভাল। তা সত্বেও কুইন্টালে পাঁচ কেজি করে

বাদ দিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Complaint Rebate Rice Kisan Mandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE