এক দিনে সরকারি সহায় মূল্য বাজারের চেয়ে অন্তত চারশো টাকা বেশি। আর এক দিকে, সেই মূল্যে সরকারকে ধান বিক্রি করতে গেলে চাষিকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনেক দিন। তত দিন ধান ফেলে রাখা মুশকিল। এমনকি, সেই ধান বয়ে নিয়ে যাওয়াতেও রয়েছে বেশ খরচের ধাক্কা। কিন্তু সামনে রয়েছে আরও চাষ। টাকা না পেলে সেই চাষে হাত দিতে পারছেন না অনেকেই। তাই সরকারি সহায়ক মূল্য খোলা বাজারের দরের চেয়ে বেশি হলেও অনেক চাষিই সেই সুবিধা নিতে পারছেন না।
সে কথা স্বীকার করছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠক। সাধনবাবু বলেন, ‘‘এ কথা সত্যি যে, অনেক চাষিই প্রয়োজনের সময় ধান বিক্রি করতে পারছেন না। কিন্তু আমাদের তো যে যেমন নাম নথিভুক্ত করেছেন, সেই ক্রম মেনেই ধান ক্রয় করতে হচ্ছে। তাতে যাঁদের নাম পরে রয়েছে, তাঁদের দেরি হচ্ছে।’’
সরকার কিসান মান্ডিতে সরাসরি ধান ক্রয় করছে। আবার, পঞ্চায়েতে গিয়েও ধান ক্রয় করছে। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই ধান কেনার গতি কৃষকদের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। কিসান মান্ডিতে এক হাজার জনের কাছ থেকে ধান কিনতে প্রায় দু’সপ্তাহ মতো সময় লেগে যাচ্ছে। অথচ, জেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার কৃষিজীবী ধান বিক্রি করবেন বলে সরকারের কাছে নাম নথিভুক্ত করেছেন। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬১ হাজার চাষির ধান কিনতে পেরেছে সরকার। বাকি বিশাল সংখ্যক কৃষক অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, কবে সরকারের কাছ থেকে ডাক পাবেন, ধান ধরে রাখার মতো
অবস্থা নেই। তার উপরে, এখন বোরো ধান চাষের মরসুম। অনেক কৃষকই আমন বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বোরো ধান চাষের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ধান ধরে রাখতে গেলে, তা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সংখ্যায় খুব কম আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল চাষিই কেবল সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। তাঁদের সেই অপেক্ষা এনমনিতেও করতে হত। কেননা, এক জন চাষির কাছ থেকে সরকার দশ কুইন্টাল ধানই কিনবে। তার বেশি যাঁরা উৎপাদন করেন, তাঁদের হয় ধান ধরে রাখতে হবে অথবা খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু স্বচ্ছল চাষিরা সাধারণত ধান ধরেই রাখেন, খোলা বাজারে দাম বাড়লে তখন নিজের গোলা থেকে ধান বার করেন।
এর মধ্যে কান্দির প্রদীপ দাস, মির আসমার আলিরা জানাচ্ছেন, তাঁরা ব্লকের কৃষক বাজারে ধান বিক্রি করার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে শোনেন, আগে যাঁদের তালিকায় নাম নথিভুক্ত হয়েছে তাঁদের কাছে ধান নেওয়া হবে, তারপর নতুন নাম লেখা হবে। মির আসমার বলেন, ‘‘ততদিন অপেক্ষা করার মতো অবকাশ আমাদের নেই। কোথায় ধান রাখব? তাই বাধ্য হয়ে খোলাবাজারে তুলনামূলক ভাবে কম দামেই ধান বিক্রি করতে হয়েছে।”
কিন্তু কেন সময় মতো নাম নথিভুক্ত করেননি? চাষিরা জানাচ্ছেন, নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই সব ঠিক মতো জানেন না। বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের সামশের দেওয়ানও বলেন, “আমি একজন খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হওয়ার পরেও আমাকে জানানো হয়নি নভেম্বর মাস থেকে ধান কেনার জন্য চাষিদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। অনেক নিয়ম এলাকার বাসিন্দাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। এটা খাদ্য দফতরের কাজের গাফিলতি ছাড়া আর কী বলা যাবে।” সাধনবাবু বলেন, “আমরা দফতরের পক্ষ থেকে অনেক প্রচার করছি। আমরা পঞ্চায়েত এলাকাতেও নিয়মিত যাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy