Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বাবার নাম ‘কংগ্রেস’, বিপাকে মেয়ে

নামেও অনেক কিছু যায় আসে! ‘ক্লোজড’ হয়ে যেতে পারে ছেলে-মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টও! আজ্ঞে না, নাম-বিভ্রাট নয়। তবে? ফরাক্কার বিন্দুগ্রামের অষ্টমী মণ্ডলের বাবার নাম কংগ্রেস মণ্ডল। নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া অষ্টমীর অভিযোগ, বাবার নাম কংগ্রেস বলেই স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তার ও তার ভাইয়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।

এই সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।— নিজস্ব চিত্র

এই সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।— নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

নামেও অনেক কিছু যায় আসে!
‘ক্লোজড’ হয়ে যেতে পারে ছেলে-মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টও! আজ্ঞে না, নাম-বিভ্রাট নয়। তবে?
ফরাক্কার বিন্দুগ্রামের অষ্টমী মণ্ডলের বাবার নাম কংগ্রেস মণ্ডল। নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া অষ্টমীর অভিযোগ, বাবার নাম কংগ্রেস বলেই স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তার ও তার ভাইয়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে নড়চড়ে বসেছে প্রশাসন। বুধবার ফরাক্কার বিডিও কেশাং ওয়াং ভুটিয়া ওই ব্যাঙ্কের ফরাক্কা শাখার ম্যানেজারকে ডেকে ওই ছাত্রীর অ্যাকাউন্ট ফের চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রতনকুমার দাসের সাফাই, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এমন কাণ্ড ঘটেছে। দ্রুত ওই অ্যাকাউন্ট চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
কংগ্রেস পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার। অষ্টমী গত বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। এ বার ফের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার ভাই তপেশ মণ্ডলও নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া। স্কুলের তরফে দু’জনের নামেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আর্থিক সুবিধার জন্য ফরাক্কার ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে অষ্টমীর অ্যাকাউন্টে কন্যাশ্রীর প্রকল্পে ৫০০ টাকা জমাও পড়ে। সম্প্রতি অষ্টমীর আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পে এ বার তার ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। সেই টাকা জমা পড়েছে কিনা দেখতে গিয়েই অষ্টমী জানতে পারে তার অ্যকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অষ্টমীর কথায়, ‘‘বিষয়টি জানতে চাইলে ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, কংগ্রেস একটি রাজনৈতিক দলের নাম। তাই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
পরের দিন অষ্টমীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে যান প্রতিবেশী বাবলু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওই এক যুক্তি দেখানো হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বলি, কংগ্রেস মণ্ডলেরও তো অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কই, সেখানে তো কংগ্রেস নাম নিয়ে অসুবিধা হয়নি!’’ প্রধান শিক্ষক মহম্মদ রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই অ্যাকাউন্টটি যাতে ফের চালু করা হয় সেই ব্যাপারে ব্যাঙ্ককে চিঠি দিই। কিন্তু উল্টে ওই ম্যানেজার অষ্টমীর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার পরামর্শ দেন। সেই প্রস্তাবে রাজি হইনি।’’ তিনি জানান, এর আগে ওই অ্যাকাউন্টে অষ্টমী একবার কন্যাশ্রীর টাকা পেয়েছে। অ্যাকাউন্ট নম্বর পাল্টে গেলে জটিলতা হতে পারে।

ব্যাঙ্ক কি আদৌ এমনটা করতে পারে? ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মুর্শিদাবাদ আধিকারিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র সিংহ রায় বলেন, ‘‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। দীর্ঘ দিন ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন না থাকলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখব।’’ এ দিকে নিজের নামের কারণে ছেলেমেয়েদের যে এমন বিপাকে পড়তে হতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবেননি বছর ষাটের কংগ্রেস। বিডিওর পদক্ষেপের পরে তিনি কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি তো দূর, চোদ্দ পুরুষ কোনও দিন রাজনীতির রাস্তা মাড়ায়নি। অথচ কী কুক্ষণে আমার নাম যে বাবা-মা কংগ্রেস রেখেছিলেন কে জানে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy