দুই পরিবারের আফসোস কিছুতেই যাচ্ছে না—‘একটি বারের জন্য বলল না’। সম্পর্কের কতা জানতে পারলে তাঁরা মেনেও নিতে বলে দাবি দুই পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন সুরজিৎ ঘোষ (২২) ও গৌরী প্রধান (১৯)।
দু’জনের সম্পর্কের কথা দুই পরিবারের লোকজন ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেননি। ভাল পাত্র পেয়ে নবগ্রামে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন গৌরীর পরিবার। এমনকি কার্ড ছাপিয়ে বিয়ের নিমন্ত্রণের কথা জানিয়ে আত্মীয়-পরিজনের মধ্যে তা বিলি করতেও থাকেন তাঁরা। এ দিন গৌরীকর আশীর্বাদ করতে আসার কথা ছিল পাত্রপক্ষের লোকজনের। তার আগেই এ দিন ভোরে সুরজিৎ ও গৌরীকে নিমগাছের ডালের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার সকালে কান্দি থানার গোকর্ণ-১ প়ঞ্চায়েতের মোতড়া গ্রামের ওই ঘটনার পরেই দুই পরিবারের লোকজনের আফসোস যাচ্ছে না—‘ইসস্ ওদের সম্পর্কের কথা মুখ ফুটে একটি বারের জন্যও কেউ বলল না! জানতে পারলে হয়ত এত বড় ঘটনা ঘটত না।
এ দিন ওই খবর পেয়ে কান্দি থানার পুলিশ ঘটানস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কান্দি থানার আইসি সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রণয়ঘটিত কারণে ওই যুবক ও যুবতী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্ত অনুমান। তবে ওই ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরজিৎ কাজের সন্ধানে পশ্চিম এশিয়া গিয়েছিলেন। পাঁচ মাস আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর সঙ্গে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পড়শি গৌরীর সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। কিন্তু ওই সম্পর্কের কথা দুই পরিবারের লোকজন জানতে পারেনি। ফলে বাবা দুধকুমার প্রধান নবগ্রামে মেয়ে গৌরীর বিয়ে ঠিক করেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। সেই মত বিয়ের কার্ড ছাপানো থেকে আত্মীয়-পরিজনের মধ্যে সেই কার্ড বিলিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ দিন পাত্রপক্ষের লোকজনের আশীর্বাদ করতে আসার কথা ছিল। তার আগেই ওড়নায় গলার ফাঁস দিয়ে নিমগাছের ডালের সঙ্গে ঝুলে পড়েন তাঁরা। গৌরীকে নামানোর সময়ে তার মাথায় সিঁদুর দেওয়া ছিল। আত্মঘাতী হওয়ার আগে হয়ত সুরজিৎ তার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে স্ত্রী’র মর্যাদা দিয়েছিল বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গৌরীর বাবা দুধকুমার প্রধান বলছেন, ‘‘ওদের সম্পর্কের কথা কোনও দিনই জানতে পারিনি। এ দিন দুজনকে এক সঙ্গে ঝুলতে দেখে জানতে পারলাম। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ওই সম্পর্কের কথা একটু যদি জানাত!’’ আক্ষেপ ঝরে পড়ছে সুরজিতের বাবা প্রকাশ ঘোষের গলাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘বিয়ে দেওয়া না দেওয়া তো পরের কথা। ওদের দুজনের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তা একবার কেউ মুখ ফুটে জানাতে পারল না। জানালে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy