প্রতীকী ছবি।
ফোনটা এসেছিল সাত-সকালে। সটান গ্রাম থেকে এক পড়শি গলায় যথেষ্ট দরদ ঢেলে ‘দুঃসংবাদ’ জানিয়ে বলেন, ‘সবই আল্লার ইচ্ছে’। ছেলেটি ভ্যাবাচাকা খেয়ে জানতে চায়, ‘‘এমন তো কালও শুনেছিলাম, আপনাকে কে বলল!’’ ভূশণ্ডি গ্রামের সেই কর্তাব্যক্তি পরম নিশ্চিন্ত গলায় বলেন, ‘‘কেন গ্রামের সবাই তো তা-ই জানে।’’
সালারে ভূশণ্ডি গ্রামের মধ্য সত্তরের ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধ এখন কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের নমুনা মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বৃদ্ধ আপাতত ভাল আছেন। কিন্তু শনিবার থেকে ভূশণ্ডির বাতাসে ভাসছে যে তাঁর ‘ইন্তেকাল’ হয়েছে। এমন গুজবের খবর মুর্শিদাবাদের আনাচ-কানাচ জুড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। সালারের ওই বৃদ্ধই জেলার প্রথম করোনা পজ়িটিভ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে গ্রামের পড়শি— গত দু’দিন ধরেই তাঁকে ‘মারছে’ আবার ‘বাঁচিয়ে তুলছে’! জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা যতই অভয় দিন, কে শোনে, কার কথা! বাবার ‘মৃত্যুসংবাদ’ শুনে শুনে তাই তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছেন কলকাতার রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা বৃদ্ধের পুত্র ও আত্মীয়রা।
মাত্রাছাড়া এমনই হাজারো গুজবে কখনও মৃত্যুসংবাদ, কখনও বা কোনও উপসর্গ ছাড়াই কাউকে দেগে দেওয়া হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত বলে। জয়রামপুর থেকে ডোমকল, হরিহরপাড়া থেকে নওদা কিংবা জঙ্গিপুর থেকে বহরমপুর— গুজবের নানান ফন্দিফিকির, রকমসকম। সামাল দিতে প্রশাসনের নাভিশ্বাস।
দিনকয়েক আগেই হরিহরপাড়ার বাড়িতে ফিরেছিলেন দুই তরুণী। একজন আমেরিকা ফেরত। অন্যজন বিমানসেবিকা। দেশে ফিরে তাঁরা দু’জনে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরেই দীর্ঘ কোয়রান্টিন পর্ব সেরে ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু পাড়া-পড়শিদের সন্দেহ তাঁরা ‘করোনা আক্রান্ত’। ফলে বন্ধ হয়েছিল ওষুধ থেকে মুদি। এই অনাবশ্যক ভয় ওই দুই মহিলার পরিবারকে প্রায় একঘরে করে রেখেছিল বেশ কিছুদিন। বেলডাঙার একটি পরিবারও বাইরে থেকে গ্রামে ফিরে আসতেই পড়শিদের করোনা-জুজু তাঁদের ব্রাত্য করেছিল। হরিহরপাড়ার শঙ্করপুর গ্রামের এক বাসিন্দা সাধারণ জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতেই রটেছিল করোনার খবর। গ্রামবাসীরা প্রায় জোর করেই রক্ত ও লালারস পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠান। ‘নেগেটিভ’ আসা সত্ত্বেও তাঁর বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ করেছেন পড়শিরা। জেলা সদর বহরমপুরে মোড়ে মোড়ে ঘাপটি মেরে আছে করোনার গুজব। কাশি-সর্দি শুনলেই পাড়ার মাতব্বরেরা দেগে দিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘গুজব বড় ভয়ঙ্কর, রোগের চেয়েও। গুজব যাঁরা ছড়াচ্ছেন, খুঁজে বের করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy