Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

লাখ টাকা রফা হল মাত্র পঞ্চাশে!

জাল টাকার রমরমায় যে ফরাক্কা থেকে উমরপুরের বোলবোলাও, বেশ কিছু দিন ধরেই আঁচ পাচ্ছিল পুলিশ। সেই কারবারের তালিকায় ঘোরাফেরা করছিল বেশ কয়েকটি নাম। জাল ফেলে তাদেরই শেষতক পাড়ে তুলল জেলা পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

দর করে দাম দাঁড়িয়েছিল ৫০ হাজার। ফাঁদের ডগায় কিছু অ্যাডভান্স ঝুলিয়ে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল কারবারির কাছে। আর সেই টোপ গিলতেই জাল গুটিয়ে এনেছিল পুলিশ।

জাল টাকার রমরমায় যে ফরাক্কা থেকে উমরপুরের বোলবোলাও, বেশ কিছু দিন ধরেই আঁচ পাচ্ছিল পুলিশ। সেই কারবারের তালিকায় ঘোরাফেরা করছিল বেশ কয়েকটি নাম। জাল ফেলে তাদেরই শেষতক পাড়ে তুলল জেলা পুলিশ। উদ্ধার হল ১.১০ লক্ষ টাকার জাল নোট। সঙ্গে বেশ কয়েকটি মোবাইল এবং প্রায় হাজার চারেক খাঁটি নগদ টাকা।

ধৃত আনসারুল মণ্ডল ওরফে আপেল এবং সামসুজ্জোহা বীরভূমের মুরারই এলাকার বিশোর গ্রামের বাসিন্দা। অন্য জন হাফিজুল শেখ জাল টাকার পুরনো কারবারি। মধ্য পঞ্চাশের হাফিজুলকে বেশ কিছু দিন ধরেই পুলিশ খোঁজ করছিল।

গোপন সূত্রে খবরটা এসেছিল দিন কয়েক আগে। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ জাল গোটাতে সময় নিল দিন সাতেক। থানার এক কর্মী যোগাযোগটা রেখে চলেছিলেন। নাগাড়ে ফোন করে কারবারিদের ‘আস্থা অর্জন’ করার পরে হাফিজুল জানিয়েছিল, ‘এক দম ফাইন নোট দাদা, লাখ টাকার দাম পড়বে ৬০ হাজার।’ দরদাম করে তা শেষতক ৫০ হাজারে রফা হয়। আস্থা অর্জন করতে লোক মারফত হাজার পাঁচেক অগ্রিমও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

• ১ এপ্রিল: ফরাক্কায় উদ্ধার সাত লক্ষ জাল টাকা। ধৃত এক

• ১০ মে: ফরাক্কায় উদ্ধার পঞ্চাশ হাজার জাল টাকা। ধৃত এক

• ২০ মে: ধুলিয়ানে উদ্ধার এক লক্ষ জাল টাকা। ধৃত এক।

• ২৮ মে: বহরমপুর পঞ্চাননতলা মোড় থেকে উদ্ধার দু’লক্ষ জাল টাকা। গ্রেফতার দুই।

• ৩০ মে: ফরাক্কা থেকে উদ্ধার ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। গ্রেফতার চার জন।

• ১১ জুলাই। ফের ফরাক্কা। উদ্ধার আট লক্ষ টাকার জাল নোট। গ্রেফতার দুই।

সেই মতো, ওই পুলিশকর্মীকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মোরগ্রাম পেরিয়ে একটি ধাবায় অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। সময় মতোই হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পোশাক-আশাক ভাষা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, তিনি পুলিশকর্মী। তবে পুলিশের একটা দলও দূর থেকে নজর রাখছিল। কিন্তু পাত্তা নেই জাল নোটের সেই কারবারিদের। মিনিট ১৫ অপেক্ষার পরেই এল ফোন, “ধাবায় অনেক লোক আছে। ওখানে নয়, সাড়ে ১২টা নাগাদ চলে আসুন উমরপুরের আগে একটি বাস স্টপেজে।” সেই মতোই চুপিসাড়ে পুলিশ এগোল উমরপুর। কিন্তু ঘণ্টা খানেক কেটে গেলেও পাত্তা নেই তাদের। তা হলে কি টের পেয়ে গেল, কেউ কি ফাঁস করে দিল পরিকল্পনা?

ওই পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘ফোনটা এল ঠিক তখনই। তবে, অন্য নম্বর থেকে। এ বার তাদের বক্তব্য ‘উঁহু, জাতীয় সড়ক নয়, সোজা চলে যান উমরপুরে। মুরারই যাওয়ার রাস্তায় অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের সামনে অপেক্ষা করুন, আড়াইটে নাগাদ পৌঁছে যাব।’’ কিচ্ছু করার নেই, তাই করল পুলিশের দলটি। তবে, সেখানে আর অপেক্ষা করতে হয়নি। বড়জোর মিনিট কুড়ি। চুপিসাড়ে হাজির হল তিন জন। এগিয়ে গিয়ে লেনদেনের কথা শুরু হতেই আর সময় নষ্ট করেননি সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা। হাতেনাতে ধরা পড়ে তিন জনই। তল্লাশিতে পকেট থেকে মিলল ৫৫ টা কড়কড়ে দু’হাজারি নোট। সঙ্গে তিনটি মোবাইল আর নগদ হাজার চারেক টাকা।

রঘুনাথগঞ্জের আইসি সৈকত রায় বলছেন, “দু’জন বহু দিনের জাল নোটের খিলাড়ি। কালিয়াচক থেকে মোটা অঙ্কের জাল নোট নিয়ে আসে তারা দিন কয় আগে। বীরভূমে তারা কিছু জাল নোট চালাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fake Currency Traffickers Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE