Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
cancer

Books: ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই ধরা দিল দুই মলাটে

৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যানসার দিবসে সুব্রত পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অসুখের দিনগুলি।’

বইয়ের প্রচ্ছদ। নিজস্ব চিত্র।

বইয়ের প্রচ্ছদ। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১৭
Share: Save:

নভেম্বর ৭, ২০২১।

তিনি লিখেছিলেন, “অনুভব করছি ভীষ্ম পিতামহের শরশয্যার ওই দিনগুলো…।” তার পর আর লেখার মতো শারীরিক ক্ষমতা ছিল না তাঁর। নতুন বছরের প্রথম রাত ভোর হওয়ার আগেই চলে যান ক্যানসার-আক্রান্ত বর্ণালি বাগচী দেবনাথ।

পৃথিবীতে বহু মানুষের ক্যানসারে মৃত্যু হয়। আক্রান্ত হওয়ার পর রাতারাতি তারা যেন ভিন্ন এক পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে যায়। পরিজনদের সহানুভূতি, সমাজের করুণার পাত্র হয়ে বাকি দিনগুলো বেঁচে থাকার কষ্ট অসুখের চেয়েও বেশি পীড়িত করে রোগীকে, এমনটাই মনে করে আক্রান্তেরা। ঠিক এখানেই আপত্তি ছিল বর্ণালির। নিজেকে স্বতন্ত্র করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর অসম্ভব প্রাণশক্তি দিয়ে।

সাল ২০১৯। ক্যানসার অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ার পর অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল বর্ণালির দেহে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষার— তখন স্টেজ ফোর। হাতে সময় কম শুনে ডাক্তারবাবুকে সটান বলেছিলেন, “আমার ছেলে ছোট। আমাকে আরও কিছু দিন বাঁচতেই হবে।”

ইস্পাত-কঠিন সেই স্নায়ুর জোরেই অসম লড়াইটা ২০২২ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন বর্ণালি। যা দেখে চমকে গিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দল। সেই লড়াই, অনুভবের কথা অনিয়মিত ভাবে লিখে গিয়েছেন বর্ণালী। যা সেই অর্থে দিনলিপি না হয়েও এক অনিঃশেষ শক্তিভাণ্ডার হয়ে উঠেছে। নিজের শরীরে ক্যানসার আক্রমণের কথা জানার পর থেকে মূলত সমাজমাধ্যমে দিনের পর দিন নিজের অনুভবের কথা, যুদ্ধের কথা, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনবোধের গভীরতর ভাবনা প্রকাশ করছিলেন তিনি। চিত্রশিল্পী বর্ণালী তাঁর প্রচুর ছবি এই পর্বে ব্যবহার করেছেন। অসুখে বিবর্ণ হননি একদিনের জন্যও। নিজেকে রঙিন করে উপস্থাপন করেছেন যত্ন করে। এমনকি কেমোর পর যখন চুল পড়তে শুরু করেছে, খুঁজে নিয়েছে পাগড়ি। অসুখ জয়ের নিশান হয়ে নবদ্বীপের রাসের রং বদলে দিয়েছেন যেন।

তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে দু’মলাটের মধ্যে ধরে রাখায় উদ্যোগী হয়েছেন ঘনিষ্ঠজন অনুপ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর নারায়ণ সাহা প্রমুখ। ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যানসার দিবসে সুব্রত পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অসুখের দিনগুলি।’ ১৯ জুন, ২০১৯ থেকে – ৭ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বর্ণালির লেখার কিছু বাছাই করা অংশ সংকলিত হয়েছে তাতে।

কবিতার আগ্রহী পাঠক বর্ণালি ক্যানসার আক্রান্ত জানার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রীর ভাষায়— “আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে। হাতে রুপোলি ডট পেন বুকে লেবু পাতার বাগান।” তার পর থেকে চলেছে লেখা, নানা অভিজ্ঞতা সম্বল করে। এবং কোনওটাই মৃত্যুর কথা বলেনি। বলেছে লড়াই এবং বাঁচার কথা।

“হ্যাঁ, আমি আগেও বলেছি, আজও মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে বলছি, ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়...” বর্ণালি লিখেছেন চলে যাওয়ার মাস চারেক আগে, ২০২১-এর অক্টোবরে।

বইয়ে সম্পাদকের কথায় সুব্রত পাল লিখেছেন— “প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে জীবনের সমাপ্তিকে খানিকটা প্রলম্বিত করে তুলতে পেরেছিল সে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের ক্ষুদ্র জীবনবৃত্তের অন্তর্নিহিত বড় জীবনের ইশারাকে সে ছুঁয়ে ফেলতে পেরেছিল তার অসুখের দিনগুলোতে— সেই বৃহতের সামর্থ্য, তার সৌন্দর্য ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল তার বন্ধু ও পরিচিতজনদের মধ্যে।”

ক্যানসার-বিষয়ক এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনুপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অসুখের আগে এবং পরের জীবনের মধ্যবর্তী পাঁচিল ভাঙার পাঠ নিজের শেষ তিন বছরের জীবন দিয়ে শিখিয়ে দিয়ে গেলেন বর্ণালি। এমন একটি মৃত্যু-নিশ্চিত অসুখ নিয়েও শেষ দিন পর্যন্ত ‘আমি তোমাদেরই লোক’ বলতে পারা বিরল মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। ওঁর স্পিরিটটাই আমরা ধরতে চেয়েছি এ বারের বিশ্ব ক্যানসার দিবসে।”

বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত বইটি ওই দিন বর্ণালির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

cancer Book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy