বৃদ্ধা সরিয়ে নিচ্ছেন তোরঙ্গ (ইনসেটে)। নীচে ভাঙা হচ্ছে দোকানঘর। মঙ্গলবার জাগুলিতে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
জাতীয় সড়কের দু’পাশ থেকে দোকান সরতে থাকায় বহু দিন পরে সম্প্রসারণের কাজ শুরুর সম্ভাবনা শেষমেশ তৈরি হচ্ছে।
নদিয়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, জমি-জটে অনেক দিন ধরেই ওই কাজ আটকে ছিল। অথচ রাস্তার দু’ধারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে বছর তিনেক আগেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই এলাকায় ইতিমধ্যে দুই লেনের বেশ চওড়া অসম্পূর্ণ রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আরও লেন বাড়িয়ে তা চওড়া করা হবে। তার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের জমিও বেশি লাগবে।
সে কারণে সোমবার থেকে জেলায় যেখানে জাতীয় সড়কের শুরু, সেই জাগুলি থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। প্রচুর পুলিশ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা এই কাজে নেমেছেন। সে দিন আনন্দপুর থেকে কালীপুরের মধ্যে বেশ কিছু নির্মাণ ভাঙা হয়। অনেকে নিজেরাই তাঁদের দোকানপাট বা বাড়ির সামনের অংশ যা অধিগ্রহণের এলাকায় পড়বে, তা ভেঙে নিয়েছেন। জেসিবি মেশিন দিয়ে বাকিটা ভাঙা হয়েছে।
মঙ্গলবার উচ্ছেদের কাজ চলে জাগুলি থেকে কল্যাণীর মোড় পর্যন্ত। এ দিন বেশির ভাগ টিনের দোকানের মালিকেরা এসে মালপত্র সরিয়ে নেন। তার পরেই শুরু হয় ভাঙা। তবে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি রেস্তরাঁ ভাঙা ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়। মাস তিনেক আগে সেটি তৈরি হয়েছে। সেটির মালিক শুভদীপ সিকদার দাবি করেন, এই এলাকায় রাস্তা ইতিমধ্যে অনেকটাই চওড়া হয়ে যাওয়ায় তিনি ভেবেছিলেন রাস্তার পাশে দোকান করলে সমস্যা হবে না। কিন্তু আধিকারিকেরা তাঁকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচিল হল সীমানা। পাঁচিলের বাইরের সব জমিই রাস্তা তৈরির কাজ লাগবে। ওই ব্যবসায়ী দিন কয়েক সময় চান। কিন্তু তাঁকে এ দিনই জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে বলেন আধিকারিকেরা। তাঁরা সব সরিয়ে নেওয়ার পরে উচ্ছেদের কাজ হয়।
এ দিন আরও কয়েক জন মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, বছর তিনেক আগে এই এলাকার জমি মাপা শুরু হয়েছিল। সে সময়ে রাস্তার জন্য যতটা পর্যন্ত জমি নেওয়া হবে তা খুঁটি পুঁতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু এ দিন খুঁটি থেকে প্রায় তিন ফুট বাড়তি জায়গা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের লোকজন জানান। এ নিয়ে খানিক বাক্বিতণ্ডার পরে ওই সব বাড়ির সামনের অস্থায়ী নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়।
নিজের বাড়ির সামনে টিনের চালা ভাঙতে-ভাঙতে গণেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘এই জায়গায় একটা চালা তৈরি করা হয়েছিল। টিউবওয়েলও বসানো হয়। কারণ, তিন বছর আগে বলা হয়েছিল রাস্তার জন্য বাড়ির সামনের ওই অংশ অধিগ্রহণ করা হবে না। এখন লাল কালির দাগ দিয়ে খুঁটি থেকে আরও তিন ফুট জায়গা বেশি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।’’
একই ভাবে সাইকেল ও মোটরবাইক গ্যারাজ মালিক সাধনচন্দ্র ঘোষও দাবি করেন, সরকারের আগের জরিপের সঙ্গে এখনকার জরিপ মিলছে না। ফলে এ দিন তাঁকেও দোকানের সামনের খানিকটা নির্মাণ ভাঙতে হয়েছে। বড়জাগুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বীথি মাতব্বর আধিকারিকদের জানান, তাঁদের স্কুলের খুব সামান্য জমিই অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু এর জন্য পড়ুয়াদের অসুবিধা হবে। তিনি ওই স্কুলের জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য প্রশাসনের কর্তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, একেবারে রাস্তা ঘেঁষে স্কুল থাকলে অনেক সমস্যা হবে। ফলে স্কুল ভাঙতেই হবে। বীথির আক্ষেপ, ‘‘এখন কাউন্সিল অন্য জায়গায় স্কুল তৈরি না করে দিলে পড়ানোই মুশকিল হবে!’’
তবে জাগুলি বাজারে দোকানপাট ভাঙা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই এলাকায় দোকান রয়েছে ভাস্কর সাহার। তাঁর বক্তব্য, রাস্তার ধারে এলাকার এক জনের বহু জমি ছিল। তাঁর জমি লিজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দোকান বানিয়ে ব্যবসা করতেন। সরকার জমি ও কাঠামো ভাঙার জন্য আলাদা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। কিন্তু এখানে জমির ওই মালিককে দুইয়ের জন্যই টাকা দেওয়া হয়। মালিক এখনও দোকানদারদের কাঠামো ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কাঠামোর টাকা না পেলে ব্যবসায়ীরা বাধা দিতে পারেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুধবার ওই এলাকায় উচ্ছেদ হবে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টা মেটানো যাবে। প্রায় সর্বত্রই তো বিনা বাধায় উচ্ছেদ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy