ফাইল চিত্র।
দেশ হারানোর আতঙ্ক বড় ভয়ঙ্কর। এ রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে কোনও কাজ এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু অসমের অবস্থা দেখেই আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে তেহট্ট মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী অসংখ্য বাসিন্দার। ভোরের অন্ধকার থাকতেই নাগরিকত্বের প্রমাণ জোগাড় করতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে হত্যে দিচ্ছেন তাঁরা। হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে কিংবা পাড়ার গাছতলায় এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় এটাই।
যাঁরা অতীতে কোনও সময়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছেন তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ায় স্বাভাবিক। কিন্তু সম্প্রতি অসমে নতুন নাগরিক পঞ্জি থেকে বহু মানুষের নাম বাদ যাওয়ায় এ দেশে যাঁরা জন্মেছেন তাঁরাও কম বেশি চিন্তায়। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষই উৎকণ্ঠায় নিজেদের নাগরিকত্বের কাগজপত্র নিয়ে। সবাই পরিচয়পত্রের কাগজপত্র ঠিক করতে ব্যস্ত।
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এনআরসি নিয়ে বিভিন্ন রকম খবর প্রকাশ করছে। বিভিন্ন দলের নেতারা বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি আর আতঙ্ক বাড়ছে।
অনেক মানুষ ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই বংশ পরম্পরায় এ দেশে বসবাস করছেন। তাঁদের কেউ-কেউ অর্থাভাবে আজও জমি কিনতে পারেননি। এখন তাঁরা কী ভাবে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের ভারতের নাগরিক প্রমাণ করবেন সেটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সীমান্তের কাঁটাতার-ঘেঁষা করিমপুর-১ ব্লকের ব্রজনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় পিপুলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান ফুলসুরত বিবি জানান, এলাকার মানুষ চরম চিন্তায় পড়েছেন। দিনমজুরের কাজ করা গরিব মানুষ নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ কাগজ পত্র জোগাড় করতে সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন। কাজ বন্ধ করে সরকারি দফতরে পড়ে থাকায় তাঁদের অন্ন সংস্থানেও সমস্যা হচ্ছে।
সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিন থেকে এলাকার অনেকে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, জমির কাগজপত্র জোগাড় করতে বিভিন্ন অফিসে ভিড় করছেন। সম্প্রতি করিমপুর ১ ব্লকে সমন্বয় শিবিরে কয়েক হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। তাঁদের বেশিরভাগের চোখে মুখে ছিল এনআরসির জন্য আতঙ্ক। বহু মানুষ পরিচয়পত্রের বিভিন্ন ভুল সংশোধন করতে শিবিরে এসেছিলেন।
ব্রজনাথপুর গ্রামের বৃদ্ধ খিলাফত সেখ যেমন বলেন, “আমার পূর্বপুরুষেরাও ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু অভাবের কারণে কোনও জমি কিনতে পারিনি। সরকারি জমিতেই এত কাল বসবাস করে আসছি। এখন নিজেকে এ দেশের নাগরিক প্রমাণ করতে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও রেশন কার্ড ছাড়া অন্য কিছু অর্থাৎ জমির কাগজ দেখাতে পারব না। এখন কি হবে বুঝতে পারছি না।”
আবার কারও জমির কাগজে বাবার নামের বানান এক রকম অথচ, ভোটার বা আধার কার্ডে সেই বানান আলাদা। এই দুই ব্যক্তি যে আসলে এক জনই তা প্রমাণ কী ভাবে করা যায় তা খুঁজতে তাঁরা দিশেহারা। অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রশাসনের থেকেও তেমন আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় ব্লক অফিস থেকে শুরু করে ভূমি সংস্কার দফতরে বহু মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy