তলিয়ে যায় বাড়িঘর, গাছপালা। সরাটিতে। নিজস্ব চিত্র।
দুপুরে গঙ্গার ও পারে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে। ভাসিয়ে দেবে গঙ্গার দু’কূল। এ পারে একদম কিনারে মুখ ভার করে বসে আছে আমিনুর মণ্ডল। গঙ্গার ঘোলাটে জলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’দিন ধরে গঙ্গার ভাঙন দেখে কত কথা মনে পড়ছে। এক সময় চাষের জমি ছিল বিঘা চার পাঁচেক। হালের গরু ছিল। ইটের গাঁথুনি দিয়ে পাকা বাড়িও ছিল। সুখের সংসার ছিল। হাসিখুশিতেই দিন কেটে যেত। কোথায় হারিয়ে গেল সব কয়েক বছরে!
গত কয়েক বছরে চাষের জমি সবই গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা বক্ষে। সেই সঙ্গে সুখের নীড় বাড়িটাও গিয়েছে।? চাষের জমি নেই। তাই হালের বলদ বেচে দিয়েছেন। তাতে সংসার চলেছে কিছু দিন। একটা ছেলে ছিল সেও নিরুদ্দেশ। বছর কয়েক আগে বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আর গিয়ে আর ফিরে আসেনি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানান, এখন পরের জমিতে দিন মজুরি করে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেবেন। এক দম গঙ্গার ওপরেই ছোট্ট একটা রান্নাঘর অবশিষ্ট রেখেছে রাক্ষুসে গঙ্গা। সেখানেই স্বামী-স্ত্রী রাতটুকু কাটান। হয়তো সেটিও তলিয়ে যাবে গঙ্গার গর্ভে। এই জীবনের গল্প শুধু আমিনুরের একার নয়। ওই এলাকার বাকি পঁচিশটি পরিবারের। কল্যাণী বিধানসভার গঙ্গার ধারে বসবাসকারী মানুষদের জীবনের গল্প।
সরাটি গ্রামেরই নাসিরউদ্দিন বাগানিয়াও শুনিয়েছেন সেই একই কথা। তাঁর ঘরের পাশেই আরও সাত ঘরের বসতি ছিল। আজ শুধু কয়েকটা ভাঙা ইটি এ দিক ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। গঙ্গার ভাঙনে প্রাণ বাঁচাতে বসতি উঠিয়ে চলে গেছে অন্য ঠিকানায়। সাত ঘরের মধ্যে পাঁচ ঘর চলে গেছে পাশের গ্রাম ঈশ্বরীপুরে। আর দুই ঘর আরও ভিতরের দিকে চলে গিয়েছে। বাগানিয়া বলছেন, ‘‘রাতের ঘুমটাও এই সময় ঠিকঠাক হয় না। কখন দেখব ভাঙন ঢুকে গিয়েছে ঘরে।’’
স্থানীয় বিধায়ক অম্বিকা রায় শুক্রবার চর যাত্রাসিদ্ধি ও চর জাজিরায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে যান। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় ভাঙন রোধের চেষ্টা করব। এটিই আমার সব কাজের মধ্যে প্রথম কাজ হিসাবে প্রাধান্য পাবে।’’
তাঁর আশ্বাসে অবশ্য শান্ত হতে পারেননি আমিনুরেরা। তাঁদের কথায় স্পষ্ট, তাঁরা ব্রাত্যজনই থেকে গেলেন। সরকারে কে এল কে গেল তাতে তাঁদের জীবনের কোনও ওঠাপড়া নেই। একমাত্র আপন হয়ে আছে গঙ্গার ভাঙন, যাকে বুকে নিয়েই রাতের ঘুম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy