Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাপ বাঁচাতে সর্বত্র পৌঁছন তিনি

সাপেদের কোনও ক্ষতি যাতে না হয় সে ব্যাপারে তাঁর অটুট নজর। সাপ উদ্ধারের পর সযত্নে তাকে নিয়ে ছোটেন বন দফতরে। সেই সঙ্গে শুরু করেন সাপের শুশ্রূষা।

সরীসৃপপ্রেমী: আট ফুটের এই ময়াল সাপটি সোমবার রাতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে উদ্ধার করেন দেবাশিস। নিজস্ব চিত্র

সরীসৃপপ্রেমী: আট ফুটের এই ময়াল সাপটি সোমবার রাতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে উদ্ধার করেন দেবাশিস। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

ভোরবেলা হোক বা গভীর রাত—খবর পেলেই ঝাঁপি হাতে ছুটে যান তিনি। সাধারণত যাদের মানুষ ভয় পান, সেই সাপেদের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ আর ভালবাসা তাঁর। হাতের কায়দায় একটি ছোট্ট লোহার লাঠির সাহায্যে দিব্যি বিষধর সাপকে ঝাঁপিতে পুরে ফেলতে পারেন। তা সে গোখরো, ময়াল, কেউটে যা-ই হোক না কেন।

সাপেদের কোনও ক্ষতি যাতে না হয় সে ব্যাপারে তাঁর অটুট নজর। সাপ উদ্ধারের পর সযত্নে তাকে নিয়ে ছোটেন বন দফতরে। সেই সঙ্গে শুরু করেন সাপের শুশ্রূষা। বেথুয়াডহরি পঞ্চায়েতে এলাকায় বাসিন্দা পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস বৈদ্য-র জীবনের অন্যতম লক্ষ্য সাপ-রক্ষা। তাঁর বিশ্বাস, পৃথিবীতে সাপেরা এখন বিপন্ন। শান্তিপ্রিয়, অনবদ্য এই প্রাণীকে অযথা ভয় পেয়ে মানুষ মেরে ফেলছে। তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং জীবজগতের অসাধারণ এক সৃষ্টি সাপেরা ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তাই নিজের কাজের বাইরে অবসরটুকু পুরোটাই তিনি সঁপে দিয়েছেন সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজে।

গত সোমবার রাতেই যেমন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর প্রায় ৮ ফুট লম্বা একটি ময়াল সাপ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এলাকার লোকেরা খবর দেন দেবাশিসকে। তিনিই সাপটি ধরে স্থানীয় বন দফতরের কর্তাদের হাতে তুলে দেন। তার চিকিৎসাও করেন। তার পর সাপটি জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। দেবাশিসের কথায়, ‘‘সাপের ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষা করা যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি মানুষের মার থেকে সাপেদের রক্ষা করা। তা না-হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না।’’ তিনি গত ৯ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়াই। শুধু মনের তাগিদে। কোনও পারিশ্রমিকও নেন না। উল্টে নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে মোটরবাইকে তেল ভরে ছুট লাগান। দেবাশিসের সাপ বাঁচানোর কাজে সর্বক্ষণের সঙ্গী সনজিৎ ঘোষ ও বাবাই দে।

তাঁরাই জানালেন, দেবাশিস ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘আরণ্যক’ উপন্যাস পড়েই প্রকৃতির প্রতি ভালবাসার সূত্রপাত। তার পর থেকে আপনা থেকেই আগ্রহ তৈরি হয় সাপের প্রতি। সাপ ধরার প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন বই পড়তে শুরু করেন। ক্রমশ নিজের চেষ্টায় দক্ষ হয়ে ওঠেন সাপ ধরায়। দেবাশিসের আফশোস, ‘‘বনজঙ্গল কেটে নেওয়ায় সাপেরা প্রাণ বাঁচাতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে আর মানুষ আতঙ্কে সাপ মেরে ফেলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bethuadahari Snake Wildlife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy