Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
চোরাকারবারে নতুন মুখ বাড়ছে
Crime

এক রাতেই ৮০০ টাকা, ভয় ভুলে পাচারে

লকডাউনে রুজি হারানো সাধারণ স্থানীয় মানুষেরা এই সব সীমান্ত পাচারে জড়িয়ে পড়ছেন অর্থাভাবের কারণে।  

কাশির সিরাপ।

কাশির সিরাপ।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৫:৫০
Share: Save:

অনভ্যস্ত আচরণেই প্রথম নজর পড়ে। এমন একটা জ্যাকেট বছর কুড়ির এক যুবকের গায়ে সেই প্রথমবার উঠেছিল, যার খাপে খাপে ৮৫টি কাশির সিরাপের বোতল। তার হাঁটাচলা দেখেই বিএসএফ জওয়ানদের অভ্যস্ত চোখ ধরতে পারে, গন্ডগোলটা কোথায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বহরমপুরের চরভদ্রা আউটপোস্ট থেকে ধরা পড়ে যায় সে। তার পরে জানা যায়, করেল রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিল। সেখানেই থাকত। লকডাউনে বাড়ি ফিরে কোনও রোজগার নেই। তখন এক বন্ধুর পরামর্শে পাচার করতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? এক রাতে ওই বোতলগুলো সীমান্ত পার করে দিতে পারলেই হাতে কড়কড়ে ৮০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত মাদক মামলায় এখনও জেল হেফাজতেই রয়েছে সেই শ্রমিক।

ধরা পড়েছেন এক মহিলাও। বাড়ি জলঙ্গিতে। বাড়িতে বেকার স্বামী। তিন ছেলে মেয়ে। এক ছেলে পরিযায়ী শ্রমিক। বাড়ি ফিরেছে দিন কুড়ি আগে। তাই রুজির টানে বেরিয়েছিল সীমান্তের পথে বিকেলে। কিন্তু বিএসএফের কড়া পাহারায় সীমান্ত পথে চলতে অনভ্যস্ত মহিলা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যান। তাঁর কাছে তল্লাশি চালিয়ে মেলে মাত্র ১৫ বোতল কাশির সিরাপ, কয়েক প্যাকেট ডিটারজেন্ট পাউডার, গুটিকয় তেলের শিশি। বাজার থেকে কিনে পাচার করার চেষ্টা করছিলেন।

কেন এমন সব অনভ্যস্ত মুখ দেখা যাচ্ছে সীমান্তে?

বিএসএফের সন্দেহ, এই সব পাচারে বড় কোনও চাঁই জড়িত বলে মনে হয় না। লকডাউনে রুজি হারানো সাধারণ স্থানীয় মানুষেরা এই সব সীমান্ত পাচারে জড়িয়ে পড়ছেন অর্থাভাবের কারণে।

বহরমপুর সেক্টরের ডিআইজি কুণাল মজুমদার বলেন, ‘‘এই সময় মাদক পাচার সম্ভব নয় স্থল পথের অভাবে। তাই গরুর পাচার বাড়ে। কিন্তু লকডাউনে যানবাহন বন্ধ থাকায় গরু পাচার বন্ধই ছিল। বিএসএফ জওয়ানরাও কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় তাই পাচার নিয়ে চিন্তা বেড়েছে। এখন লকডাউনের জন্য কাজ নেই হাতে। তাদেরই কিছু তরুণ, যারা ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এসেছে এই ভাবে পাচারের চেষ্টা করছে। বেকার বসে থেকে তারাই প্রথমে মাদক, এখন গরু পাচারে নেমেছে।”

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, লকডাউনে যাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বা যে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই, তাঁদের জন্য সরকার একশো দিনের কাজ সহ নানা প্রকল্প করেছে। তার পরেও কেউ যদি পাচারের মতো কাজে নামে, তা হলে তিনি অন্যায় করছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে শুধু অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য দিনে ২০৪ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের সে কাজে আগ্রহ কম।’’ সুতি সীমান্তের এক পঞ্চায়েত সদস্য ওয়াজেদ আলি বলছেন, “১০০ দিনের কাজ পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেরই পছন্দ নয়। কম পয়সার সে কাজে আগ্রহ নেই তাঁদের। কিন্তু টাকা চাই। তাই লোভে পড়ে সীমান্তে পা বাড়াচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy