Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

পানের চুন খসলে মার ডাক্তারকে

১ অগস্ট মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগে রোগীর মৃত্যুর পরে বাড়ির লোক কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫২
Share: Save:

কথায়-কথায় ডাক্তার পেটানোর বেশ চল হয়েছে আজকাল। বিশেষ করে হাসপাতালের ডাক্তার। একচুল এদিক-ওদিক হলে বা কিছু না-হলেও তাঁদের গায়ে হাত তুলছেন এক শ্রেণির লোকজন। কিছু দিন আগেও যা ভাবা যেত না।

৯ অক্টোবর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট যুবকের দেহ জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে এনে আত্মীয়-বন্ধুরা দাবি করেন, চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ডাক্তার বোঝাতে গিয়ে হেনস্থা হন। ৬ অক্টোবর আজিমগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরে এক যুবক রিভলভার উঁচিয়ে শাসায়, ‘সূচ ফোটাচ্ছ ফোটাও, এক ফোঁটা রক্ত বেরোলে কিন্তু খুলি উড়িয়ে দেব।’ পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় পরে আদালত থেকে সে জামিনও পেয়ে যায়।

১ অগস্ট মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগে রোগীর মৃত্যুর পরে বাড়ির লোক কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করে। খবর পেয়ে লাগোয়া হস্টেল থেকে প্রায় ২০০-২৫০ জন জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারির ছাত্র লাঠি-বাঁশ-উইকেট হাতে এসে পাল্টা মার দেয়। খবর সংগ্রহে গিয়ে মার খান তিন চিত্রসাংবাদিকও।

ছবিটা আলাদা নয় নদিয়াতেও।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে এক রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে ডাকতে এসেছিলেন বাড়ির লোক। তিনি ভিড় সামলে যাওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। এর পরেই তাণ্ডব, মারধর করা হয় মহিলা চিকিৎসককেও। রাতে মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে থাকা স্ত্রীকে চলে যেতে বলায় নিগৃহীত হন এক চিকিৎসক। নিজের চেম্বার থেকে হাসপাতালে রোগী পাঠান চিকিৎসক। কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসা করেননি বলে পরে তাঁকেই নিগ্রহ করা হয়।

তবে সব ক্ষেত্রে রোগীর পরিজনই ভিলেন আর ডাক্তারেরা ধোয়া তুলসী পাতা, এমনটা নয়। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালেই বারবার কলবুক দেওয়া সত্ত্বেও ডাক্তার না আসায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মার খেয়েছেন ডাক্তার। সাম্প্রতিক ঘটনায় স্পষ্ট, ডাক্তার-রোগীর পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে এবং মৃতের শোকগ্রস্ত পরিজনকে উস্কানোর লোকেরও অভাব হচ্ছে না।

বছর দুয়েক আগে রোগীর বাড়ির লোকজনের হাতে প্রহৃত হন অস্থি-শল্য চিকিৎসক ওয়াসিম বারি। বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম যুবকের পায়ে প্লাস্টার করে তিনি কলকাতায় রেফার করেন। কিন্তু নিয়ে যাওয়ার আগেই যুবক মারা যান। সেটাই হয় ওয়াসিমের ‘অপরাধ’। চিকিৎসকের আক্ষেপ, ‘‘রোগীর পরিজনদের ডেকে বিষয়টা বুঝিয়ে ছিলাম। ওঁরা বোঝেনও। কিন্তু পরে ওঁদের খেপিয়ে তোলা হয়।’’ ওয়াসিমের মতে, ‘‘উত্তেজিত করার লোকের অভাব নেই। হাসপাতালে বেশ কিছু লোক নানা উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ব্যক্তিস্বার্থে ঘা লাগলে তারাই দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষগুলোকে বিপথে চালিত করে।’’

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE