Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জুজুর নাম এনআরসি, ঝাঁঝ নেই ডিজে, মাইকের

মাইক ব্যবসায়ীদের দাবি, দুর্গাপুজো কালীপুজোয় প্রশাসন চড়া স্বরে সাউন্ড সিস্টেম বাজানো যাবে না বলে ফতোয়া জারি করল, আর এ বার ঠিক মরসুমের আগেই চলে এলো এনআরসির ভুত!

ভাড়া নেওয়ার লোক নেই, ঝাঁপ বন্ধ ডিজে’র দোকানের। নিজস্ব চিত্র

ভাড়া নেওয়ার লোক নেই, ঝাঁপ বন্ধ ডিজে’র দোকানের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

গত শীতেও ডোমকল বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে দোকানটার সামনে ছিল থিক থিকে ভিড়। ডিজে বক্স ভাড়া নেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত টোটো-লছিমন এমনকি বড় ট্রাক্টরও। আর সকাল সকাল সে সব সাজিয়ে বাজার কাঁপিয়ে চলত পিকনিক স্পটের দিকে।

কিন্তু নতুন বছরের গোড়ায় সে ছবিটা এ বার বদলে গিয়েছে। বাজারের প্রতিষ্ঠিত মাইক ব্যবসায়ী হামিদ খানের মাইকের দোকানের সামনে ভিড় উধাও। দিনের বেশিরভাগ সময়ে বন্ধ থাকছে দোকান, খোলা থাকলেও ডিজে জেবিএলের মতো বুক কাঁপানো সাউন্ড সিস্টেম নেওয়ার, নাহ কেউ নেই। কপালে হাত রেখে হামিদ বলেছেন, ‘‘সবই কপালের দোষ দাদা, গত বছর ডিজে-জেবিএলের চাহিদা দেখে এ বছর মরসুমের আগেই শহর থেকে ভাল দাম দিয়ে সাউন্ড সিস্টেম কিনলাম, ভাল ব্যবসার আশায়। ভেবেছিলাম বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসবে ব্যবসাটা জাঁকিয়ে চলবে। কিন্তু শীত জাঁকিয়ে পড়লেও ব্যবসায় বেজায় মন্দ।’’ মাইক ব্যবসায়ীদের দাবি, দুর্গাপুজো কালীপুজোয় প্রশাসন চড়া স্বরে সাউন্ড সিস্টেম বাজানো যাবে না বলে ফতোয়া জারি করল, আর এ বার ঠিক মরসুমের আগেই চলে এলো এনআরসির ভুত!

মানুষের মনে আনন্দ নেই, নথি জোগাড় করতেই দিনভর ব্যস্ত। ফলে পিকনিকের ইচ্ছেটাও বুঝি অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। জলঙ্গির মাইক ব্যবসায়ী লালন খান বলছেন, ‘‘অন্য বারের তুলনায় অর্ধেকও ব্যবসা নেই, দোকান খুলে মাছি তাড়াচ্ছি। অথচ এই সময়ে নাওয়া খাওয়ার সময়টাও মেলে না। কিভাবে ব্যবসা চলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।’’তবে কেবল এনআরসি নয়, ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ব্যবসার এমন হালের পিছনে হাত আছে অর্থনীতির। দেশ জুড়েই মন্দা। ছোট ব্যবসায়ীদের হাল ভাল নয়, আকাশছোঁয়া আনাজের দাম ফলে সব মিলিয়ে মানুষ ভাল নেই।

তবে ব্যবসায়ীদের মন্দা হলেও এই ঘটনা অনেকটাই শাপে বর হয়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে। বুক কাঁপানো কান ফাটানো শব্দ দানবের অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে আম আদমির। ডোমকলের বাসিন্দা জহিরুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘বছর কয়েক ধরে শব্দ দানবের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এ বার শব্দ দানবের হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পাব মনে হচ্ছে।’’ তবে ব্যবসায়ী নয়, মনখারাপ পিকনিক প্রেমী মানুষের। যাঁরা পৌষ মাস এলেই মেতে ওঠেন পিকনিকের আনন্দে। কখনও পরিবারকে নিয়ে, কখনও আবার বন্ধুদের হাত ধরে— এ বার যেন রাশ টেনেছেন তাঁরাও। ডোমকলের বাসিন্দা বাবু মণ্ডল বলছেন, ‘‘বছর তো বিদায় নিল, কিন্তু এনআরসি’র জুজু, তার তো বিদায় হল না, ভয়ে আর আনন্দে মাতি কী করে বলুন তো দাদা!’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRC DJ Domkol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy