—ফাইল ছহি
বাড়ি থেকে দেখতে পাই ফরাক্কার এনটিপিসি-র চিমনির ধোঁয়া। সেখানে কত মানুষ কাজ করে। আমার কাজ সেখানে হয়নি। আমার বাবা সাধারণ কৃষক। আমি মাধ্যমিক পাশ। আমি অনেকবার বাবুদের পায়ে ধরেছি, একটা কাজের জন্য। রাজনীতির দাদা দিদিদের কাছে কাতর আবেদন করেছে আমার বাবা। আমার কাজের জন্য। কিন্তু কাজ হল না। তাই দিনমজুরের যারা কাজ করে তদের দেখা শোনার জন্য একটা কাজ পেলাম ওড়িশার কটকে। বেসরকারি সংস্থা তারা কনস্ট্রাকশনের কাজ করে। মাসিক বেতন, এনটিপিসির মতো না হলেও আমাদের পরিবার চলে যাবে। আমি কাজ পেয়েছি শুনে বাবা মা খুশি হয়েছে। আবার তাদের ছেড়ে দুরে থাকব বলে কষ্টও পেয়েছে। কটক শহর বেশ ভাল। সেখানকার ভাষা আমি বুঝতে পারতাম না। এখন অনেকটা শিখেছি। তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলছিলাম। ইদের সময় বাবা মার জন্য জামা কাপড় নিয়ে বাড়ি যখন আসতাম তখন মার চোখে দেখতাম স্নেহের মমতা। বাড়ির পরিবেশ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বাবার বয়স হয়েছে তবু্ও সকাল হলে জমি থেকে টাটকা আনাজ তুলে আনবে। হাট থেকে পোনা মাছ। ইদের পর যখন কাজের জায়গায় ফিরে যতাম তখন বাব মার চোখেন কোনায় জল দেখতে পেতাম। তবু্ও ভাল ছিলাম। আমার সব কিছু ওলোট পালোট করে দিল লকডাউন।
লকডাউন শুরু হতেই সবাই যেন ঘুমিয়ে। বাইরে যেন কেউ বের না হয়। কিন্তু ক'দিন ঘরে থাকব খাবার কোথায় পাব। যারা স্থানীয় তাদের সরকার খাবার দিচ্ছে। যারা পরিযায়ী তাদের কে দেবে?
আমাদের ম্যানজারকে বললাম বাড়ি যাওয়ার একটা ব্যাবস্থা করে দিতে। আমার কথায় সে এক লরি ড্রাইভারকে বলে। লরি হাওড়া পৌঁছে দেয়। তারপর কোন দিকে যাব পথ ঠিক করতে পারছি না। এর মধ্যে দেখলাম একটা ছোট ট্রাকে কয়েকজন বসে আছে। সেখানে গিয়ে জানতে জানলাম তারা যাবে বহরমপুর। আমি যেন হাতে স্বর্গ পেলাম। তাদের বললাম আমি ফরাক্কা যাব। গাড়ির ড্রাইভার বলল ভাড়া চারশো টাকা। চেপে বসলাম ট্রাকে। আমার কাছে খাবার কিছু না থাকায় আমার সহযাত্রীরা আমাকে রুটি আর আলুর তরকারি খেতে দিয়েছিল। তারপর ভোরবেলা আমাদের নামিয়ে দিল বহরমপুরে। এখানেও কোন কিছু নেই যে ফরাক্কা যাব। বাসস্ট্যান্ডে ঘুম ভাঙে পুলিশের লাঠির খোঁচায়। রোড ধরে সোজা হাটতে লাগলাম। ব্রিজ পেরিয়ে খাগড়া স্টেশনের কাছে পৌঁছে আবার কোন গাড়ি আসে কি না তার আশায় থাকলাম দুপুর বেলা একটা এ্যাম্বুলেন্স পেলাম। সেই এ্যাম্বুলেন্সে ফরাক্কা পৌছালাম। সেখান থেকে হেটে আমতলা বাড়ি এলাম। তিন দিনে বাড়ি পৌঁছলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy