Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ঠোঙায় এত জাদু ভর্তি, কে জানত?’

মুদির দোকানি যখন তাঁকে বলেন যে, এ বার থেকে আরও বেশি করে ঠোঙা দিতে হবে তখন যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

প্লাস্টিক সরতে বেড়েছে ঠোঙার চাহিদা।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

প্লাস্টিক সরতে বেড়েছে ঠোঙার চাহিদা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

দশ বছর বয়সে ঠোঙা বানাতে শিখেছিলেন। কিন্তু সে দিনের সেই শেখা যে এত বছর পরে তাকে দু’পয়সা বাড়তি রোজগারে সাহায্য করবে, কল্পনা করেননি ঝর্ণা রায়।

মুদির দোকানি যখন তাঁকে বলেন যে, এ বার থেকে আরও বেশি করে ঠোঙা দিতে হবে তখন যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। মঙ্গলবার দুপুরে ঘরের মেঝেতে বসে ঠোঙা বানাতে বানাতে বলছিলেন, “এত দিন শুনতাম, প্রত্যেকেরই নাকি কখনও না কখনও সুদিন আসে। আমার ক্ষেত্রে এমন হবে সেই আশা ছেড়েছিলাম। ঠোঙা বানিয়ে কোনওদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারব না, নিজেকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কোনও শিক্ষাই বৃথা হয়ে যায় না।’’ আরও বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের প্যাকেটের এমন রমরমা ছিল, সে-ও যে বাতিল হবে কে কবে ভেবেছিল? আমাদের সুসময় তো এতেই ফিরল। বছরখানেক আগে নেহাতই সময় কাটানোর জন্য অল্প-অল্প করে ঠোঙা বানাতে শুরু করেছিলাম। তখন খরিদ্দারই পেতাম না। আর গত সপ্তাহ থেকে বাড়ি বসে বরাত পাচ্ছি। ঠোঙায় এত জাদু ভর্তি, কে জানত?”

১৮ অক্টোবর থেকে কৃষ্ণনগর শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করার অভিযান শুরু হয়েছে। পুরসভার কর্তারা দফায় দফায় বাজারে অভিযান চালাচ্ছেন। ফলে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে কাগজের ঠোঙার চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন তেমন ভাবে ব্যবহার না হওয়ায় ঠোঙার চাহিদা তলানিতে ঠেকেছিল। অনেকেই ঠোঙা বানানো থেকে সরে এসেছিলেন। আচমকা ফের চাহিদা বাড়ায় সব জায়গায় উৎপাদন বা জোগান বাড়ানো যাচ্ছে না। ঝর্ণাদেবী যেমন বলছেন, “হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা তো হচ্ছেই। বাড়ির কাজ সামলে খুব বেশি ঠোঙা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।”

হাতারপাড়ার বাসিন্দা বিষ্ণু অধিকারীরও একই অবস্থা। ১৫ দিনে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ঠোঙা বানাতে পারেন । কিন্তু অর্ডার আসতে শুরু করেছে তার থেকে অনেক বেশি। তিনি যেমন দোকানিদের বলে দিয়েছেন, “এর বেশি পারব না। এই বয়সে এত পরিশ্রম করা যাবে না।”

স্বভাবত দোকানিরা একটু চিন্তায়। কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন বাড়াতে না পারলে সমস্যায় পড়বেন বুঝতে পারছেন। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক তথা কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রশাসক সৌমেন দত্ত অবশ্য বলছেন, “এটা কোনও সমস্যাই নয়। কারণ, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি অনেক পরিবারই আবার ঠোঙা তৈরির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। উৎসাহ দেখাচ্ছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Paper Packet Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy