Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Delhi Violence

উনুনে আঁচ পড়ল নেহারিতে

ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরছেন এই খবর নওদার ত্রিমোহিনী নেহারিতলা পৌঁছতেই খুশি পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারে।

হাসি ফিরল নেহারিতে। বৃহস্পতিবার। ছবি: মফিদুল ইসলাম।

হাসি ফিরল নেহারিতে। বৃহস্পতিবার। ছবি: মফিদুল ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নওদা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরছেন এই খবর নওদার ত্রিমোহিনী নেহারিতলা পৌঁছতেই খুশি পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারে। দিল্লির দাঙ্গা বিধধস্ত এলাকায় আটকে পড়েন ত্রিমোহিনী নেহারিতলা গ্রামের বাসিন্দা তেরোজন যুবক। বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হতেই দিল্লির জাফরাবাদ সংলগ্ন এলাকায় আটকে পড়া শ্রমিকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার জন্য আহবান জানান। তারা তাদের বাড়িতেও ফোন করে তাদের দুর্দশার কথা জানান। বুধবার দিনভর পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে ছোটেন বিডিও অফিস থেকে জনপ্রতিনিধিদের দরবারে। প্রশাসনের তৎপরতায় তাদের উদ্ধার করে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বহরমপুর লোকসভার সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী বৃহস্পতিবার দাবি করেন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘটনার কথা জানতে পেরেই তিনি তাঁর দিল্লির অফিস এবং গৃহ মন্ত্রণালয়কে জানানোর পর জাফরাবাদ থানার পুলিশ তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। দিল্লির অন্য প্রান্তে আটকে পড়া নেহারিতলা গ্রামের শ্রমিক আলমগির শেখ ও সাহারুল শেখ নামে দুই ভাইও যোগাযোগ করে কালামদের সাথে। তাঁরাও একই সঙ্গে ঘরে ফিরছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় ট্রেনে চেপেছেন মহম্মদ কালাম, ইমামুল, জব্বার, আওলাদরা।

অধীর বলেন, ‘‘দিল্লির দাঙ্গায় আটকে পড়া নওদার যুবকদের উদ্ধার করে কলকাতার ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আতঙ্কিত পরিবারের সকলকে বলব, আপনাদের লোকেরা বাড়ি ফিরছে, চিন্তা নেই।’’

বৃহস্পতিবার সকালে জব্বার ওরফে রমজান সেখের মা খুরশিনা বিবি বলেন, ‘‘রাতেও ভাত রান্না করে গিলতে পারিনি। পেটের ছেলে তিন দিন না খেয়ে আছে আমি মা হয়ে কি করে খাই বলুন?’’ ছেলে বাড়ি ফিরছে শোনার পর এ দিন সকালে আলু সেদ্ধ ভাত রান্না করে কোনক্রমে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন খুরশিনা। প্রায় তিন দিন পর বুধবার দুপুরে প্রথম আলু সেদ্ধ ভাত খেয়েছে কালাম, জব্বার, ফরিদ, সাদ্দাম শেখরা। বৃহস্পতিবার সকালে উনুনে হাঁড়ি চড়িয়েছেন ইমামুলের মা মাহেলা বিবিও।

ভিড়ে ঠাসা কালকা মেল থেকে মহম্মদ কালাম মোবাইলে বলেন, ‘‘সকাল সাতটায় ট্রেন। শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই ঘরে ফিরব।’’

সুত্র মারফৎ জানা গিয়েছে বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ জাফরাবাদ থানার পুলিশ গন্ডাচকে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে যায়। কিন্তু তাঁরা আদতে পুলিশ না দাঙ্গাবাজ বুঝতে পারেনি শ্রমিকেরা। সব কিছু বোঝার পর প্রায় পৌনে একটা নাগাদ পুলিশের দু’টি গাড়িতে চাপিয়ে তাঁদের পুরনো দিল্লি স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই তাদের ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়।

সাদ্দাম বলেন, ‘‘ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আসার কষ্টটা কিছুই না। প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরছি এটাই বড় কথা।’’ দুই সন্তান ঘরে ফিরছে জেনে খুশি আওলাদ সেখ ও হালিম শেখের মা আরফাতন বিবি। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়ির উঠোনে দাড়িয়ে আরফাতন বলেন, ‘‘ছেলে দু’টোই আমার সম্বল।’’

আপাতত ঘরের ছেলেদের আর দিল্লি ফিরতে দেবেন না তাঁদের পরিজনেরা। তবে তার পরে কী হবে, তা এখনও জানেন না তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Naoda Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy