Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2021

Durga Puja: কাজ শিখে বরাত আনছেন শিল্পীর মেয়ে

মাঝে এক বছর বাদ দিলে গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাগবাজার সার্বজনীনের মুকুট তৈরি করছেন আশিস বাগচী।

তৈরি হচ্ছে মুকুট। নিজস্ব চিত্র

তৈরি হচ্ছে মুকুট। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:২১
Share: Save:

গত বছর পর্যন্ত পুজোর মুখে চকের পাড়া বারোয়ারির পাশে দোতলা বাড়ির দিকে তাকালে চোখে পড়ত— দেওয়ালে হেলান দিয়ে একমনে তারের মুকুট বাঁধছেন ডাকের সাজ শিল্পী আশিস বাগচী। এ বছর সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা ফ্রেমে বাঁধানো আশিসবাবুর একটা ছবি।

ঘরের বাঁ দিকে বাগবাজার সর্বজনীনের মুকুটের আদলে একটা ১০ ফুটের মুকুট। শেষ পর্যায়ের কাজে ব্যস্ত আশিসবাবুর মেয়ে আবৃত্তি। সঙ্গে রয়েছেন প্রায় ২৫ বছর ধরে মুকুটের কাজে যুক্ত গৌর হালদার। তাঁদের কাছ থেকেই জানা গেল, মুকুটটি তৈরি হচ্ছে জামসেদপুরের ২৬ ফুট উঁচু এক প্রতিমার জন্য।

মাঝে এক বছর বাদ দিলে গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাগবাজার সার্বজনীনের মুকুট তৈরি করছেন আশিস বাগচী। কিন্তু এই বছর বাগবাজার সার্বজনীনের মুকুট যাচ্ছে না তাঁর বাড়ি থেকে। কারণ গত ২০২১ সালের মে মাসে করোনা কেড়ে নিয়েছে আশিসবাবুর প্রাণ।

সে সময়ে সংশয় দেখা দেয়— আশিসবাবুর উপর নির্ভর করে চলা ডাকের সাজের মুকুট তৈরির কারখানা আদৌ চলবে কিনা! তাঁর এক মাত্র মেয়ে আবৃত্তি তখনও পর্যন্ত মুকুট তৈরির ব্যাপারে কোনও দিন আগ্রহ দেখাননি। গণিতে স্নাতকোত্তর পাস করা আবৃত্তি বর্তমানে একটি বেসরকারি স্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত।

আবৃত্তি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই দেখতাম মুকুটের কাজ নিয়ে বাবা পুজোর সময় এতটাই ব্যস্ত হয়ে যেতেন যে, অন্য বন্ধুদের মতো আমাদের পুজোও দেখা হয়নি। বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। মুকুটের কারখানাটা ছিল আমার চোখের বালি।’’

আশিসবাবু মারা যাওয়ার পর প্রথমে কারখানাটি বন্ধই করে দেবেন ভাবেন আবৃত্তি। কিন্তু তাঁর মা বুলু তাঁকে বোঝান— বাবার ভালবাসার কাজের মধ্যেই স্মৃতির বেঁচে থাকা, তাই যে ভাবেই হোক কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সঙ্গে অনেকগুলো মানুষের পেটের বিষয়।

মুকুট তৈরির কিছুই জানা ছিল না আবৃত্তির। ঘরে বসে মুকুটের চাঁদ, মালা বা টুকটাক কাজ করলেও এর বেশি ব্যবসায় মাথা গলাননি বুলুও।

এমন অবস্থায় হাল ধরতে পাশে এসে দাঁড়ান আবৃত্তির কাকা শান্তনু বাগচী এবং আশিসবাবুর কাছে দীর্ঘ দিন কাজ করা গৌর হালদার, মিঠু হালদার-সহ বাকি শিল্পীরা। গৌরের কাছে আবৃত্তি মুকুট তৈরির পাঠ নিতে থাকেন, শিখতে থাকে মুকুটের বিভিন্ন অংশ। এর পর এক দিন কাকার সঙ্গে কলকাতায় কুমোরটুলি যান আবৃত্তি। যোগাযোগ করেন বাবার চেনা প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে, যাঁরা আশিসবাবুর থেকে ডাকের সাজের মুকুট নিতেন।

যদিও একদম প্রথমে পেশাদার শিল্পীরা নতুন আবৃত্তিকে ভরসা করতে পারছিলেন না। যে কারণে বাগবাজার সার্বজনীনের কাজটি হাতছাড়া হয়। বাগবাজার সার্বজনীনের প্রতিমা শিল্পী নারায়ণচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘শিল্পী আশিস বাগচীর উপর আমাদের অগাধ ভরসা ছিল। কিন্তু এই কাজে একদম নতুন তাঁর মেয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিমার মুকুটের দায়িত্ব আদৌ নিতে পারবেন কিনা, সেই সংশয়ে কাজটা দিতে পারলাম না।’’

তবে আবৃত্তিকে পুরোপুরি নিরাশ করেনি কুমোরটুলি। ছোটখাট কাজের বরাত-সহ জামসেদপুরের জন্য ১০ ফুটের মুকুটের বরাত পান কুমোরটুলি থেকেই। হালে পানি পান কারখানায় কর্মরত গৌর হালদার, মিঠু হালদার, দীপঙ্কর দাস-সহ অন্যরা। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বাড়িতে পাঁচ জনের সংসার চলে এই কারখানার ভরসায়। কারখানা বন্ধ হলে এই করোনা কালে কাজ পাওয়া সমস্যা হয়ে যেত।’’

আর বিখ্যাত ডাকের সাজের শিল্পীর ভাবী প্রজন্ম আবৃত্তি বলছেন, ‘‘নতুন নতুন কাজের বরাত আসছে। আশা করছি, যে সব পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2021 Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy