গরম কি খালি উকিলদেরই। আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে প্রশ্ন তুললেন ওঁরাই। সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, পিয়ারুল শেখ, পায়েল রাজবংশী ও নিমাই ঘোষ।
খুনের মামলায় পুলিশ ধরে এনেছে স্বামীকে। জামিনের আর্জি জানাবেন বলে চাপড়ার সুঁটিয়া থেকে এসেছিলেন কৃষ্ণা ঘোষ। এসে শোনেন, কোর্ট বন্ধ। পাথুরিয়া মান্নান বিশ্বাসও এসেছিলেন একই কারণে। তাঁর প্রশ্ন, “গরম বুঝি শুধু উকিলবাবুদেরই লাগে? আমরা যে এত গরমে মাঠে চাষ করে টাকা নিয়ে এসে ওঁদের দিই, তখন?”
নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য সম্প্রতি একাধিক বার কর্মবিরতি করেছেন আইনজীবীরা। এ ক’দিন বেশি গরম পড়ায় ২৩ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ফের কর্মবিরতি হচ্ছে। চারটি বার অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মঙ্গল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কাজ হবে না। তা জানতেন না বিচারপ্রার্থীরা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁরা এসে হাজির হয়েছেন আদালতে।
বুধবার আদালতে মামলা উঠবে বলে শ্বশুরবাড়ি পুরুলিয়া থেকে বহরমপুরে এসেছেন অনন্যা রায়। তিনি বলেন, ‘‘বহরমপুরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসার গাফিলতি নিয়ে মামলা করেছি। বুধবার দিন পড়ায় এই গরমে অসুস্থ শরীরে ধকল সয়ে পুরুলিয়া থেকে বহরমপুর এসে শুনি, কর্মবিরতি চলছে।’’
আইনজীবীদের এই কর্মবিরতিতে বিরক্ত অন্য পেশার মানুষেরাও। কৃষ্ণনগরে এক ট্র্যাফিক কর্মীর কটাক্ষ, “এই প্রখর রোদে আমরা ঘণ্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। এক বারও তো মনে হয় না, কর্মবিরতি করি!” পোস্ট অফিস মোড়ে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছিলেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অম্লান সরকার। তিনি বলেন, “এই গরমেও ছুটতে হচ্ছে ডাক্তারদের কাছে। ভাবতেই পারি না যে কাজ করব না।”
দৌলতাবাদ এলাকার ফেরিওয়ালা পিয়ারুল শেখ বলেন, ‘‘সকাল থেকে চানাচুর-বিস্কুট নিয়ে রাস্তায় ঘুরি। গলা শুকোয়, মাথা ঘোরে। কিন্তু বিক্রি না হলে খাব কী? আইনজীবীদের বোধহয় সেই চিন্তা নেই।” কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা, বাসের খালাসি নিমাই ঘোষ বলেন, ‘‘বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে শরীর ঝলসে যায়। আইনজীবীরা মক্কেলদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে বসে থাকেন, চিন্তা করতে হয় না।’’
কেন বিচারপ্রার্থীদের হয়রান করা? ফোরাম অব বার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায়ের বক্তব্য, “আমাদের গাউন পরে কাজ করতে হয়। প্রচণ্ড রোদে মাঠ পেরিয়ে এক এজলাস থেকে আর এক এজলাসে যেতে হয়। প্রবীণ আইনজীবীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপক রায় বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সকলের। বিভিন্ন আদালতে কর্মবিরতি চলায় সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি।’’ বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের ওই সিদ্ধান্তে এক শ্রেণির আইনজীবী অবশ্য ক্ষুব্ধ। কৃষ্ণনগর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শুধু যাতাযাতের হয়রানি নয়, বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ক্ষতি হচ্ছে। যাঁরা এসিজেএম আদালতে জামিন পেলেন না, জেলা জজের কাছে তাঁরা আবেদন করতে পারছেন না। আবার জমির ক্ষেত্রে ইনজাংশন জারি করতে না পেরে অনেকের জমি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।”
তবে এ রকম দু’একটা ক্ষীণকণ্ঠ প্রতিবাদে যে কিছু এসে-যায় না, তা কর্মবিরতির নেতারা ভালই জানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy