বিশেষ ট্রেনে হরিদ্বার থেকে ফিরলেন প্রায় এগারোশো পরিযায়ী শ্রমিক। কৃষ্ণনগরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
আসার কথা ছিল দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ। সেই ট্রেন যখন হরিদ্বার থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে এসে দাঁড়াল, তখন প্রায় রাত পৌনে আটটা। একে একে কামরা থেকে নামলেন ক্লান্ত-বিধ্বস্ত চেহারার যাত্রীরা। তবে শেষ পর্যন্ত বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতে পেরে এত ক্লান্তির মধ্যেও তাঁদের চোখেমুখে স্বস্তির ছাপটুকু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের এই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষ ট্রেনটি চোদ্দো বগি-বিশিষ্ট। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা ট্রেনের প্রতিটি কামরার সামনে কিছুটা দূরে দূরে কাউন্টার করা হয়েছে। সেখানে মেডিক্যাল টিমের কর্মীরা ফিবার গান হাতে একে একে যাত্রীদের পরীক্ষা করে চলেছেন। নথিভূক্ত করা হল তাঁদের নাম, ঠিকানা। সোমবার সকাল থেকেই গোটা স্টেশন চত্বর ঘিরে ফেলা হয়েছিল কড়া নিরপত্তা বলয়ে। জেলা ও রেল পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল সেখানে। ট্রেন ঢোকার আগে কর্তারা টহল দিচ্ছিলেন। ট্রেন আসার আগে থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এ দিন।
এ দিন ট্রেন ঢোকার পরে কামরা থেকে নেমে আসা যাত্রীদের একে এসে প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হতে থাকে। বাইর তখন অপেক্ষা করছে ১০টি বাস। পরীক্ষার পর সেই যাত্রীদের বাসে তোলা হয়। যাত্রী নিয়ে বাস একে একে রওনা হতে থাকে কৃষ্ণনগর জেলা স্টেডিয়ামের দিকে। সেখানে তখন অন্য রাজ্য থেকে বাসে করে ফিরে আসা যাত্রীরা দুপুর থেকে অপেক্ষা করছেন। আর অপেক্ষা করছে ৪০টি বাস। জেলা প্রশাসন থেকে জানা গিয়েছে, হরিদ্বার থেকে ফেরা এই বিশেষ ট্রেনে যাত্রী ছিল প্রায় এগারোশো জন। তাঁদের কারও কারও বাড়ি অন্য জেলায়। আবার, কারও বাড়ি নদিয়ার অন্য কোনও প্রান্তে। প্রতিটা বাসে ৩০ জন করে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাতে যাত্রীদের একে একে নিয়ে আসা হয় স্টেডিয়ামের মাঠে। সেখান থেকে যে এলাকায় যাঁর গন্তব্য, তাঁকে সেই এলাকার বাসে তুলে দেওয়া হয়। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বাস বা ট্রেনে করে ফেরা মানুষদের জন্য খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঝাড়খণ্ড থেকে বাসে করে ফেরা চিত্রশালী এলাকার এক বাসিন্দা বাবন বৈদ্যের অভিযোগ, “আমরা দুপুর তিনটে নাগাদ এসে পৌঁছেছি। তার পর থেকে মাঠে এই গরমের মধ্যে বাসের ভিতরে বসে আছি। একটু পানীয় জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।” এই নিয়ে বাইরে থেকে বাসে করে ফেরা যাত্রীরা সামান্য বিক্ষোভও দেখান। তবে পুলিশ তাঁদেরকে শান্ত করে।
যদিও এ দিন ট্রেনে করে ফেরা যাত্রীরা জানিয়েছেন, ট্রেনে তাঁদের কোনও সমস্যা হয়নি। খাবার দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে টিকিটের জন্য টাকাও নেওয়া হয়নি।
এ দিন ট্রেন ঢোকার আগেই পৌঁছে যান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক বিভু গোয়েলও পৌঁছে যান সেখানে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় এগারোশো জন এসেছেন। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি আলিপুরদুয়ারের মানুষ। প্রায় ৩৫০ জন। কোচবিহার জেলার ৯০ জন। হুগলি জেলার ১১২ জন। নদিয়া জেলারও ১০ জন আছেন।”
তিনি পরে জানান, স্টেডিয়াম থেকে বাসে করে সকলে নিজের এলাকায় চলে যাবেন। এঁদের মধ্যে যদি কারও করোনা-উপসর্গ পাওয়া যায়, তা হলে তাঁকে আলাদা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy