Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

গ্রামে আতঙ্ক আছে, নেই পানীয় জল   

বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না কেউ। পানীয় জল না পেয়ে অনেকে টিউবওয়েলের জল খাচ্ছেন। অসুস্থ হলেও ওষুধ পাচ্ছেন না।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সাগর হালদার
বার্নিয়া (‌তেহট্ট) শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৪:০৫
Share: Save:

করোনার আতঙ্কে এখনও নিঝুম বার্নিয়া গ্রাম।

দিল্লি থেকে ভাইরাস নিয়ে এসে এলাকায় মেলামেশা করেছিল গ্রামের যে পরিবারটি, তাদের আক্রান্ত পাঁচ সদস্য বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি। আরও কয়েক জন রয়েছেন রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে। এঁদের সংস্পর্শে আসায় ৬৭ জনকে বাড়িতেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

তেহট্ট ব্লক প্রশাসনের চারটি দল শ্রীকৃষ্ণপুর থেকে বার্নিয়ার প্রতিটি পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। প্রত্যেকের ফোন নম্বরে ব্লক প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনের বিশেষ কন্ট্রোল রুম নম্বর (৮১১৬৩৫৫৫৯৯), যাতে যে কোনও উপসর্গ বা সমস্যার ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা যায়।

কিন্তু এর পরেও ভীতি কাটছে না বার্নিয়ার। বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না কেউ। পানীয় জল না পেয়ে অনেকে টিউবওয়েলের জল খাচ্ছেন। অসুস্থ হলেও ওষুধ পাচ্ছেন না। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে ব্যস্ত প্রশাসন সোমবার পর্যন্ত বিশেষ সুরাহাও করতে পারেনি।

বার্নিয়ার বাসিন্দা জিল্লুর রহমানের দাবি, তাঁর পরিচিত অনেক পরিবারের লোকই বাড়ির টিউবওয়েলের জল ফুটিয়ে খেয়েছেন। না ফুটিয়ে এমনি দু’চার ঢোঁক খেয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। সে ক্ষেত্রে পেটের রোগ হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। বেশি আর্সেনিক থাকলে তো আরও বিপদ।

তেহট্টের মহকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্তের বক্তব্য, বার্নিয়ায় বোতলের জলের চলই বেশি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাড়িতে-বাড়িতে জল দিতেন। এখন তাঁরাও আতঙ্কে গৃহবন্দি। তাই জলের জোগানে টান পড়ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশাসনই গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না কেন? কিছু বোতলের জল জোগাড় করে বার্নিয়ায় পৌঁছে দেওয়া কি সত্যিই খুব কঠিন?

মহকুমাশাসকের আশ্বাস, স্থানীয় ব্লক প্রশাসন এবং জল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্নিয়ার দিনমজুরি করা গরিব মানুষ পড়েছেন আর এক সমস্যায়। পেটে ব্যথা হোক বা অন্য কোনও সাধারণ অসুখ, আতঙ্কে তাঁরা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এলাকার কিছু ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও তাঁদের পক্ষে টাকা খরচ করে ওষুধ কেনা সম্ভব নয়। এত দিন তাঁরা প্রত্যেকেই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা পলাশিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে যেতেন। কিন্তু এখন ঘর তেকেই বেরোতে পারছেন না, অত দূর যাবেন কী করে?

এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন: সাধরণ জ্বরজারি বা পেট খারাপের ওষুধ কি প্রশাসন এঁদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না?

বার্নিয়ার বাসিন্দা আলিয়া বিবির কথায় ‘‘এই সময়টায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সব ধরনের ওষুধ ঘরে দিয়ে যায়, মানুষের সুবিধা হবে।’’ তবে ব্লক প্রশাসনেপ দাবি, আশাকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কাউকে ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়, তাই তাঁরা সমস্যার কথা লিখে আনছেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অসুস্থদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন।

বার্নিয়ার মতো এতটা না হলেও ভাল রকম আতঙ্ক রয়েছে তার কাছ ঘেঁষা বেতাই, দেবগ্রাম, নাকাশিপাড়া, বেথুয়াডহরি, পলাশিপাড়া, তেহট্ট বা করিমপুরে। লকডাউন হওয়ার পরেও এই সব এলাকার বাসিন্দারা কিছুটা হলেও দোকান-বাজার যেতেন, এখন তা-ও প্রায় বন্ধ। শ্রীকৃষ্ণপুরের পাশের গ্রামে রয়েছে মসজিদ। জিল্লুর জানান, মসজিদের তরফ সোমবার সকালে ঘোষণা করা হয়েছে, গ্রামের কেউ যেন বেশ কিছু দিন বাইরে না যান এবং বাইরে থেকে কেউ যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে, তা দেখতে।

তেহট্টের বাসিন্দা মিরা বিশ্বাস জানান, সোমবার অশোক ষষ্ঠীর জন্য অশোক ফুল দরকার ছিল। কিন্তু তা মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘অশোক ষষ্ঠী পরের বছর ভাল করে করা যাবে। এখন কিছুতেই বেরনো যাবে না।’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Barnia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy