Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

খাঁ খাঁ শ্মশানে দেহ পুড়ছে কুড়োনো কাঠে  

বেলডাঙা পুরসভা এলাকা ও বেলডাঙা ১ ব্লক, নওদা, হরিহরপাড়ার একটা অংশের একমাত্র শ্মশানঘাট ভাগিরথীর পূর্ব দিকে কুমারপুর শ্মশান।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪৭
Share: Save:

লকডাউনের জেরে দেশ জুড়ে নানা ক্ষেত্রে টানাপড়েন। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকার শ্মশানগুলোও খাঁ খাঁ করছে। কুমারপুরে দু’টি শ্মশান। এই দু’টি শ্মশানের উপরে নির্ভর করেন বিরাট একটি এলাকার মানুষ।দু’টি শ্মশানেই কাঠের চুল্লি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মমতাজ বেগম বলেন, “লক ডাউন চলাকালীন শ্মশান দু’টোতে মৃতদেহ আসার সংখ্যা খুব কম। তবে পরিষেবা নিয়ে কেউ সমস্যায় পড়লে আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, কাঠের জন্য কাছাকাছি গাছ থেকে ডাল কেটে দিতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, যানবাহনের অভাবে কাঠ পর্যাপ্ত মিলছে না।

কী অবস্থা শ্মশান ঘাটে?

বেলডাঙা পুরসভা এলাকা ও বেলডাঙা ১ ব্লক, নওদা, হরিহরপাড়ার একটা অংশের একমাত্র শ্মশানঘাট ভাগিরথীর পূর্ব দিকে কুমারপুর শ্মশান। সেখানকার অবস্থা কেমন? অন্য সাধারণ দিনে কুমারপুর শ্মশানঘাট যাওয়ার রাস্তা কুমারপুর স্কুল মোড় মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান, তেলে ভাজার দোকান, টোটোর ভিড়ে রাস্তা দেখা যায় না। ওই পথ ঠেলে শ্মশান পৌঁছনো দায় হয়ে ওঠে। কিন্তু লকডাউনে সব ভিড় উধাও। একটু এগিয়ে কুমারপুর শ্মশানে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল।

সেখানে কেউ কোথাও নেই। ডান দিকে বন্ধ চায়ের দোকান রেখে নদী তীরে হাঁটলেই শ্মশান খালি। কেউ কোথাও নেই। দিনেই এই অবস্থা তাহলে রাতে কী?

এলাকার মানুষ কী বলছেন? নদীতে নৌকার কারবার সামলান (যেটা লকডাউনে বন্ধ) সেই কাঞ্চন দাস বলেন, “কুমারপুর শ্মশানে কোনও দিন তিন বা চারটি দেহ আসে। কখনও দু’টো। কোনও দিন একটা মৃতদেহও আসে। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই সেই হিসাব মিলছে না। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে শেষ কবে মৃতদেহ আসতে দেখেছি, তা মনে করতে পারছি না।”

নদীর ধারে বসবাস করেন দীপেন মণ্ডল। তিনি বলেন, “গত প্রায় ১৪ দিনে সব মিলিয়ে দু’টো বা তিনটে মৃতদেহ আসতে দেখেছি। তবে তার সবগুলো দিনে। রাতের অন্ধকারে রাস্তায় কুকুর ছাড়া অন্য প্রাণী দেখা মেলে না। যাঁরা আসছেন তাঁরাও আসছেন নীরবে। অন্য সময় এক এক জনের দেহের সঙ্গে বিশ-পঁচিশ জন লোক আসেন। সেই সংখ্যা এখন কখনও চার কখনও গাড়ির চালককে নিয়ে ছয়।”

কেন এই অবস্থা? গ্রামে গ্রামে অনেকেই বলছেন, কাঠের অভাব হতে পারে বলে অনেকেই প্রিয়জনের দেহ নিয়ে সোজা চলে যাচ্ছেন বহরমপুরে। খাগড়া শ্মশানঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। সেখানে রোজ সাধারণ দিনের তুলনায় বেশি দেহ আসছে। অর্থাৎ, অনেকেই গ্রামের বা কাছের শ্মশানে যাচ্ছেন না।

গ্রামের শ্মশানে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা কী ভাবে শ্মশানের কাজ করছেন? সম্প্রতি বেলডাঙার চৈতন্যপুর এলাকার স্বপন মণ্ডলের মৃতদেহ নিয়ে এসেছিলেন মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমরা পাঁচ জন মিলে ছোট গাড়ি করে শ্মশানে এসেছিলাম। কাঠ পাব কি পাব না, তাই সঙ্গে বাড়ি থেকে সামান্য শুকনো কাঠ নিয়ে গিয়ে ছিলাম। তবে ফেরার সময় কাছা কেনার জন্য দোকান খোলা পাইনি। সঙ্গে মিষ্টির দোকানও বন্ধ ছিল ছিল। যে মিষ্টির দোকান খুলেছে সেখানে গজা ও বাতাসা ছাড়া কিছু নেই। গ্রামে ফিরে লৌকিক আচার কোনও রকমে সেরেছি।”

তিনি জানান, শ্মশানযাত্রীই পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও বাড়িতে মৃত্যু হলে আগে গ্রামের অনেকে নিজেরাই এগিয়ে আসতেন। এখন কেউ সে ভাবে এগিয়ে আসতে রাজি নন। আর কাউকে বলাও যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা শ্মশানে আসছেন, তাঁদের অনেকের নানা আবদার থাকে। কেউ পানীয় কেউ অন্য খাবার। এখন ওসব নেই। তবে চাইলেও তো আর মিলবে না।’’ একই অবস্থা পাশের সুজাপুর শ্মশান ঘাটের।

এমনই অবস্থা বেলডাঙা ২ ব্লকের প্রধান শ্মশান শক্তিপুর শ্মশানে। ভাগিরথীর পশ্চিম পাড়ের পাঁচটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রধান শ্মশান ঘাট এইটি। সেখানে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, দৈনিক মৃত দেহ পৌঁছয় দু’টি, কোনও দিন একটা। কোন দিন তিনটে। ৩০ দিনের হিসাবে সেটা ৬০টি। কিন্তু সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। স্থানীয় শক্তিপুর কেএমসি ইনস্টিটিশনের শিক্ষক প্রদীপনারায়ন রায় বলেন, “লকডাউনের সময় শক্তিপুর শ্মশানে মৃতদেহ আসার সংখ্যা অনেক কমেছে। তবে অন্তত েই শ্মশানে মৃতদেহ পোড়ানের কাঠ খোঁজ করলে পাওয়া যাচ্ছে। কাছার কাপড় বা মিষ্টির দোকানের সন্ধানও মিলে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy