রোকেয়া বিবি-জাকির হোসেন
লকডাউনের আওতা থেকে ছাড় দেওয়ার কথা আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সে ডাকে সাড়া না দিয়ে বিড়ি মালিক সংগঠন জানিয়ে দিল—যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল, বিড়ি পাঠাব কোথায়!
অরঙ্গাবাদ ও তাকে ঘিরে থাকা কয়েকশো বিড়ি কারখানা তাই নিভৃতবাসেই রইল! ফলে এলাকার প্রায় বারো লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের কাজে ফেরা অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলে থাকল। যা দেখে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সিটু ও আইএন টিইউসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— কথা দিয়েও কথা রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী।
সিটুর বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিড়ি শিল্পে কীভাবে কাজ পায় শ্রমিকেরা তার সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। তাই না জেনেই তিনি আশ্বাস দিয়ে বসেছিলেন।’’ আইএনটিইউসি-র বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক বাদশার আলি বলছেন, “জঙ্গিপুরে ৬ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক কাজ করেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় সেই সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। আর রাজ্যে তা ২০ লক্ষ। বিড়ি শিল্পাঞ্চল জঙ্গিপুরে বিড়ি শ্রমিকেরা বিড়ি বাড়িতে বাঁধাই করেন ঠিকই, কিন্তু বিড়ি তৈরির উপকরণ দেয় বিড়ি কারখানাগুলি। বিড়ি পাতা, তামাক, সুতো কারখানা থেকে দেওয়া হয় মুন্সিদের (ঠিকাদার)। মুন্সিরা তা বিভিন্ন গ্রামে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেয়। তা দিয়েই বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধেন শ্রমিকেরা। মুন্সিরা সেই কাঁচা মাল পৌঁছে না দিলে বিড়ি বাঁধা হবে কী করে?’’ অরঙ্গাবাদের বিড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন-ও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় বিড়ি শিল্পে অচলাবস্থা কাটার কোনও সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, “কারখানা খোলার কোনও ছাড়ের কথা বলা নেই। নেই শ্রমিকদের উৎপাদিত বিড়ি দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কিভাবে যাবে সে পরিবহনের ছাড়ও। বিড়ি কারখানা খোলা ও বিড়ি বিক্রির ছাড়পত্র না পেলে শ্রমিকদের কাজ দেওয়া সম্ভব কীভাবে ?’’
তিনি জানান, এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ বিড়ি শিল্পে জড়িত। অন্তত হাজার খানেক রিকশ ভ্যানে মুন্সিরা বিভিন্ন কারখানায় বিড়ির পাতা, তামাক সরবরাহ করেন নিত্য। প্রতিটি বিড়ি কারখানায় কাজ করেন শতাধিক কর্মী। তাঁদের আসা যাওয়ার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। সে ক্ষেত্রে লকডাউন ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে।
রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন একজন বিড়ি মালিক। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যাতে বিড়ি শ্রমিকেরা কাজ পান। এই মুহূর্তে বিড়ি কারখানাগুলি সব বন্ধ। সেগুলি খুলতে হবে। শ্রমিকদের কাছে মুন্সিদের মাধ্যমে পাতা, তামাক পাঠাতে হবে। কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আগে সরকারি নির্দেশনামা আসুক, তার পর ব্যবস্থা হবে।” জঙ্গিপুরের সাংসদ তৃণমূলের খলিলুর রহমানও বিড়ি সংস্থার মালিক। তিনি বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন, নিশ্চয় সব দিক ভেবেচিন্তেই বলেছেন। শ্রমিকদের কাজ দিতে গেলে তাঁদের কাজ করতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে কীভাবে বিড়ি শিল্পে অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব তা নিয়ে আলোচনায় বসব। তার পরেই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব।’’
যা শুনে, অরঙ্গাবাদের বিড়ি শ্রমিক ফজলুর রহমান বলছেন, “প্রায় দু’সপ্তাহ কাজ নেই। মুখ্যমন্ত্রী বিড়িকে লকডাউন থেকে ছাড় দেওয়ায় কিছুটা আশা জেগেছিল। কিন্তু তামাক পাতা দেবে কে, লকডাউন না উঠলে!’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy