দু’চাকায় পাড়ি। নিজস্ব চিত্র
গ্রামীণ দিন যাপনে পুরনো সেই দ্বিচক্রযান আবার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বাড়ি থেকে ডোমকলের দুরত্ব প্রায় ১৮ কিমি। হালের টোটো-ম্যাজিকের দুনিয়ায় শহর ডোমকলে যাতায়াত করতে হলে কুপিলা গ্রামের আনসার আলি চেপে বসতেন বাস-ম্যাজিক-টোটো বা অটোয়। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে তারা এখন নিখোঁজ। বন্দি-জীবন কিঞ্চিৎ শিথিল হতে টোটো বা ম্যাজিক উঁকি দিচ্ছে রাস্তায়। তবে, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে এখনই তাতে সওয়ারি হতে আর তেমন ভরসা পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ। আনসার বলছেন, ‘‘আমার পাশেই যিনি বসছেন, তাঁর সঙ্গে তো সামাজিক দূর্ত বিধি ঠিক মানা হচ্ছে না। ফলে একটা ভয় থেকেই যাচ্ছে। তার চেয়ে বাপু আমার পুরনো সাইকেলই ভাল।’’
ফলে বছর তিরিশ আগের বাবার কিনে দেওয়া সাইকেলটাই মেরামত করে গাঁ-গঞ্জে ভেসে পড়ছেন আনসার। সাদিখাঁরদিয়াড়ের ইদ্রিশ শেখও সেই একই সুরে রা কাড়ছেন। বলছেন, ‘‘গ্রামে থাকি। কিন্তু ব্যবসার কাজে দিনে অন্তত বিশ-বাইশ কিলোমিটার পাড়ি দিতেই হয়। টোটোয় পাঁচ জনের সঙ্গে চলাচলে আজকাল বড় অস্বস্তি হয়। তাই ঝেড়েমুছে সাইকেলখানাই ফের রাস্তায় নামিয়েছি।জলঙ্গির জুলফিকার আলি লক্ষ্য করেছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় বেসরকারি বাস বা ছোট ম্যাজিক গাড়ি চলাচল শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু পেটের দায়ে তার চালকেরা সামাজিক দুরত্ব মেনে সওয়ারি তুলছেন না। গাদাগাদি করে যাত্রী তুলছেন, অন্য দিকে যাত্রীরাও সচেতন না হয়ে উঠে বসছেন সেই ভিড়ে ঠাসা গাড়িতে।’’ তাই গত কয়েক বছরে, জীবন থেকে প্রায় ঝেড়ডে ফেলা সেই সাইকেলই আনসারদের হাত ধরে ফের ঝেড়েমুছে নেমে এসেছে আনলক-রাস্তায়। নওদার রফিকুল হক বলছিলেন, ‘‘লকডাউন আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল। হারানো অনেক অভ্যাস ফিরে এল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু মেনে নিতেও শিখলাম। সাইকেলের পুরনো ব্যবহার তারই একটা।’’গ্রামীণ মানুষের সেই সহজ বোধ শোনা গেল ডোমকল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রিয়ঙ্কর দাসের কথাতেও, ‘‘করোনা-পর্বে আমাদের সামনে মৃত্যু ভয় যেমন এসেছে তেমনই নতুন করে বাঁচতেও শিখিয়েছে। নতুন করে পুরনো জিনিসের ব্যবহারও ফিরিয়ে এনেছে। সাইকেল তার একটি বড় উদাহরণ।’’
মূলত সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতেই গ্রামাঞ্চলের একটা অংশ এখন ভরসা করছেন সাইকেলে। এক পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, ‘‘প্রান্তিক জেলা মুর্শিদাবাদের অনেকেরই মোটরবাইক কেনার সামর্থ নেই। পড়শি বীরভূম কিংবা নদিয়াতেও একই জিনিস চোখে পড়েছে। সাইকেলই তাঁদের কাছে ফের পরম প্রিয় হয়ে উঠেছে তাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy