প্রতীকী ছবি।
কিছুতেই মিটছে না টিকার আকাল। রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে যে পরিমাণ টিকা পাঠানো হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। ফলে জেলা জুড়েই টিকাদান কর্মসূচি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। আর টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘গাইডলাইন’ এতটাই সুনির্দিষ্ট যে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা চাইলেও নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিতে পারছেন না।
কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় থেকে দ্বিতীয় ডোজ়ের ফারাক অন্তত ৮৪ দিন ধার্য হওয়ায় আপাতত দ্বিতীয় ডোজ়ের চাপ কম। তাই কেন্দ্রের তরফে পাঠানো টিকা ২০টি সুপার স্প্রেডার শ্রেণির মধ্যে ৪৫ বছরে বেশি বয়সিদেরও দেওয়া হচ্ছে।
আপাতত যএ ব্যবস্থা চালু রয়েছে তাতে রাজ্য সরকার নিজে কিনে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। আর কেন্দ্র ৪৫ বছর ও তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের টিকা দেবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ২০টি বিশেষ শ্রেণির তালিকা তৈরি করেছে যারা ‘সুপার স্প্রেডার’ বা দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। এই তালিকায় হকার থেকে শুরু করে পরিবহণ কর্মী, যৌনকর্মী, সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা যেমন আছেন তেমনই আছেন কোভিড ভলান্টিয়ারেরাও। বর্তমানে এঁদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজ্য থেকে যেমন টিকা আসছে সেই মত ধাপে ধাপে এঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রের টিকায় ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদেরই শুধু টিকা দেওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠছিল, যেখানে রাজ্যের টিকায় ৪৪ বছর পর্যন্ত সুপার স্প্রেডারদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই শ্রেণির মধ্যে যাঁদের বয়স ৪৫ বছর বা তার বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে? কেন্দ্র থেকে আলাদা করে এঁদের জন্য টিকা পাঠানো হচ্ছে না। কিন্তু এখন দ্বিতীয় ডোজ়ের চাপ না থাকায় ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের এই শ্রেণির মানুষদের প্রথম ডোজ় টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলার কর্তারা জানাচ্ছেন, কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া ধার্য হওয়ায় এখন চাপ অনেকটাই কম। ফলে কেন্দ্রের তরফে যে টিকা পাঠানো হচ্ছে তা দ্বিতীয় ডোজ়ের পাশাপাশি সুপার স্প্রেডারদের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও টিকার প্রবল আকাল থাকায় সেটাও পর্যাপ্ত সংখ্যায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে কর্তাদের দাবি।
পর্যাপ্ত টিকার অভাবে অনেক আগে থেকেই ৪৫ বছর ও তার বেশি বয়সিদের প্রথম ডোজ় দেওয়া বন্ধ হয়ে ছিল। কেন্দ্রের তরফে শেষ টিকা এসেছে গত ২৮ মে। কোভিশিল্ড এসেছে মাত্র ১২ হাজার ডোজ় আর কোভ্যাকসিন মাত্র ৩০৪০ ডোজ়। ফলে অত্যন্ত হিসাব করে জেলা টিকাদান কর্মসূচি চালু রাখা হচ্ছিল। বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার হাতে কেন্দ্রের টিকা ছিল অতি সামান্য। কোভিশিল্ড ১১শো আর কোভ্যাকসিন ছিল দু’হাজারের মত। সেটাও এদিন বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছে যায় যে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এত দিন পর্যন্ত যাদের ১৬ সপ্তাহ শেষ হওয়ার মুখে কেবল তাঁদেরই দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হচ্ছিল। তবে বুধবার কেন্দ্রের তরফে বেশ কিছু টিকা আসায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ফের সচল হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কেন্দ্রের তরফে কোভিশিল্ডের ২১ হাজার ডোজ় এবং কোভ্যাকসিনের ১৩১২০ ডোজ় পাঠানো হয়েছে। জেলার কর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের তরফে নতুন করে টিকা আসায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হল। এ বার ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের মধ্যে যাঁদের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ১২ সপ্তাহ পার হয়ে যাবে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদেরও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম ডোজ় দেওয়া শুরু হবে বলে কর্তারা জানান। তবে বাস্তবে তাঁরা কতটা টিকা পাবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গিয়েছে কর্তাদের মনেই। কারণ যে সামান্য সংখ্যক টিকা আসছে তাতে কোনও ভাবেই বিরাট সংখ্যক উপভোক্তাকে দ্রুত টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়স বয়সিদের বাদ দিয়ে বাকি ক্ষেত্রে প্রায় ৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৫৮ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মোটে ৫১ শতাংশকে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
রাজ্যের কেনা টিকার ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা। রাজ্যের তরফেও খুবই সামান্য সংখ্যক টিকা পাঠানো হচ্ছে। তাতে খাতায়-কলমে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে ২০টি সুপার স্প্রেডার শ্রেণিকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হলেও বাস্তবে তা অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। জেলায় এখনও পর্যন্ত এই বয়সের মধ্যে ৬৫০৯২ জনকে প্রথম ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মঙ্গলবার এঁদের মধ্যে মাত্র ৩৬১২ জন টিকা পেয়েছিলেন। এ দিন মাত্র ৭৬৫৯ জনকে টিকা দেওয়া গিয়েছে।
বুধবার কোনও মতে এই শ্রেণির মধ্যে টিকাদান চালু রাখা গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে সেটাও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন কর্তারা। রাজ্যে তরফে গত ২৮ মে মাত্র ১৫ হাজার ডোজ় কোভিশিল্ড পাঠানো হয়েছিল। বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার হাতে মাত্র প্রায় ১১শো কোভিশিল্ড এবং ১৬০ ডোজ় কোভ্যাকসিন ছিল। এ দিন সেটাও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে কেন্দ্রের তরফে পাঠানো টিকা হাতে থাকলেও সেটা ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ রাজ্যের গ্রুপ ও কেন্দ্রের গ্রুপের টিকা মেলানো যাবে না বলে কর্তারা জানিয়েছেন। ফলে রাজ্যের তরফে নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত এই শ্রেণির টিকা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন তারা। জেলার এক কর্তার কথায়, “আমরা প্রায় ১৯০টি কেন্দ্রে টিকাদান চালু করে ফেলেছিলাম। কিন্তু টিকার অভাবে সেই সংখ্যাটা কমতে কমতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৩-য় এসে দাঁড়িয়েছে।”
তাঁদের আক্ষেপ, “এক দিকে সুপার স্প্রেডার শ্রেণির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি উপভোক্তার সংখ্যা বেড়েই চলছে। নানা দিক থেকে তালিকা তৈরি হচ্ছে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে স্বজনপোষণও শুরু হয়েছে। কিন্তু টিকার দেখা মিলছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy