প্রতীকী ছবি।
অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে বাড়িতেই কনসেন্ট্রেটর নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে প্রশাসন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা কোভিড আক্রান্তকে বাড়িতেই অক্সিজেন দিয়ে সুস্থ করে তবেই ফিরছেন। অথবা প্রয়োজন হলে সেই রোগীকে নিয়ে আসছেন সেফ হোম বা কোভিড হাসপাতালে।
প্রথমে ব্লক স্তরে ভ্রাম্যমান অক্সিজেন বাস দিয়ে প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর এ বার একেবারে পঞ্চায়েত স্তরে সেই প্রকল্প চালু করল প্রশাসন। মোটরবাইকে চেপে কনসেন্ট্রেটর নিয়ে রোগীর বাড়ি পৌঁছে যাবেন কর্মীরা।
বুধবার পরীক্ষামূলক ভাবে তেহ্ট্ট ২ ও করিমপুর ১ ব্লকে এই প্রকল্প চালু করা হল।
অনেক ক্ষেত্রেই অক্সিজেনের অভাব হলেও রোগীরা হাসপাতাল বা সেফ হোমে আসতে চান না। তাঁরা বাড়িতে থেকেই অক্সিজেন নিতে চান বা চিকিৎসা করাতে চান। এ ক্ষেত্রে কখনও কখনও অক্সিজেন না পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অথবা সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন না পাওয়ার কারণেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগী। তাঁদেরকে একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার কখনও কখনও কারও কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলেও হাসপাতাল বা সেফ হোমে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে অক্সিজেন দিয়েই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করা সম্ভব। মূলত, এই ধরণের রোগীদের জন্য ভ্রাম্যমান অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে কর্তাদের দাবি।
প্রাথমিক অবস্থায় করিমপুর ১ ও ২ ব্লক, তেহট্ট ১ ও ২ ব্লক, কৃষ্ণনগর ১ ও ২ ব্লক, নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ ও চাপড়া ব্লকে একে একে এই পরিষেবা চালু করা হয়। একটি নির্দিষ্ট গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্সে কনসেন্ট্রেটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা থাকছে। ব্লক প্রশাসন থেকে ৬ জন ও স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৬ জন মোট বারো জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা এই পরিষেবা চালু থাকছে। দিনে তিনটি সিফট-এ চার জন করে কর্মী রোগীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন। তাঁরা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন চালু করছেন।
শুধু তাই নয়, অক্সিজেনের স্তর স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা পিপিই পরে দাঁড়িয়ে থেকে অক্সিজেন দিচ্ছেন। চাপড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুজাম আলি শেখ বলেন, “দিনে প্রায় ৩ থেকে ৫ জন রোগীকে আমারা এই পরিষেবা দিচ্ছি। এঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এভাবে বাড়িতে অক্সিজেন দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হচ্ছে। আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করছেন।”
ব্লক স্তরের এই সাফল্যের পর এ বার একেবারে পঞ্চায়েত স্তরে এই পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে কনসেন্ট্রেটর দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত স্তরে ‘ভিলেজ লেভেল এন্টারপ্রেনার’-এর সঙ্গে থাকবেন ‘ভিলেজ রির্সোস পার্সন’ বা ভেক্টর কন্ট্রোল টিম’-এর সদস্যরা। তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরাই নিজেদের মোটর বাইকে করে কনসেন্ট্রেটর নিয়ে পৌঁছে যাবেন রোগীর বাড়ি। মোটরবাইকের তেলের খরচ থেকে শুরু করে পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক সরবরাহ করা হবে ব্লক থেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক স্তরে একটি ফোন নম্বর রাখা হয়েছে। সেই নম্বরটি এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারওর প্রয়োজন পড়লে সেই নম্বরে ফোন করে জানাতে হচ্ছে। সেই মতো গাড়ি বা বাইকে করে কনসেন্ট্রেটর নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন কর্মীরা।
তেহট্ট ২ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক শুভ সিংহ রায় বলেন, “আমরা প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকার জন্য একটি করে দল তৈরি করেছি। চাহিদা বাড়লে সংখ্যাটা বাড়ানো হবে।”
এই একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে করিমপুর ১ ব্লকের জন্যও। পাশাপাশি, অন্য ব্লকের ক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে একই পদক্ষেপ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা জেলার প্রশাসনকে কনসেন্ট্রেেটর দিচ্ছে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। সেই সব কনসেন্ট্রেটর এই কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলার হাতে এমন ৯০টি কনসেন্ট্রেটর আছে। সেগুলোই আপাতত ব্যবহার করা শুরু হয়েছে বলে কর্তারা জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা প্রাথমিক ভাবে দু’টো ব্লকে একেবারে পঞ্চায়েত স্তরে প্রকল্পটি চালু করছি। ধীরে ধীরে জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy