নিজস্ব চিত্র
বহু দিন ধরে লকডাউনে বাইরের জেলায় আটকে থেকে শেষমেশ বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন ওঁরা। সাইকেল চালিয়ে পুরুলিয়া থেকে মঙ্গলবার রাতে তেহট্টে ফিরে আসেন ছয় জন শ্রমিক। সচেতন নাগরিক হিসাবে রাত্রিবেলা তেহট্টে ফিরেই তাঁরা চলে যান তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে। চেয়েছিলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে তার পর বাড়ি ফিরতে। কিন্তু ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, সেখানে গিয়েও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বুধবার সকাল ১০টায় করা হবে।
এ দিকে, তাঁরা মনস্থির করেছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হলে বাড়ি ফিরবেন না। তাই হাসপাতাল বিল্ডিয়ের বাইরে খোলা আকাশের নীচে, মশা তাড়ানোর ধূপ কিনে কোনও মতে রাত কাটান। এত কষ্ট করে গরমের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পরেও ওই শ্রমিকদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি সরকারি হাসপাতালে।
অন্য দিকে, বাইরে থেকে ফেরার পরে ওই শ্রমিকদের সে দিনই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হল না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয়েরা।
ওই জন শ্রমিক পুরুলিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় সেলসম্যান হিসাবে কাজ করতেন। লকডাউনের প্রথমে খাবারের সঙ্কট সে ভাবে দেখা না দিলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের লকডাউনে রীতিমতো খাদ্যসঙ্কটে পড়েন তাঁরা। কাজ বন্ধ থাকায় তাঁদের উপার্জনও বন্ধ হয়ে পড়ে। পকেটে যেটুকু টাকা ছিল, তা দিয়ে তাঁরা কোনও ৪টি পুরনো সাইকেল এবং একটি নতুন সাইকেল কিনে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করে। সেই মতো গত সোমবার ভোর রাতে সাইকেল চালিয়ে ওই ছয় জন শ্রমিক রওনা দেয় তেহট্টের উদ্দেশে।
এঁদের মধ্যে তেহট্টের বাসিন্দা মঙ্গল সাহা, নিশ্চিন্তপুরের সমীরণ মণ্ডল, সম্রাট মণ্ডল ও রাজীব হালদার। বাকি দু’জন তেহট্ট মহকুমার হোগলবেড়িয়ার গণেশ হালদার এবং মুরুটিয়ার প্রতাপ কুন্ডু।
ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, অমানুষিক পরিশ্রম করে টানা সাইকেল চালিয়ে, অনেক কষ্টে তাঁরা মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ তেহট্টে পৌঁছান। এর পর বাড়ি না গিয়ে তাঁরা দায়িত্ববান নাগরিকের মতো সোজা চলে যান তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে।
তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই বাড়ি ফিরব। বাড়ি ফিরে, স্নান করে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে শান্তিতে ঘুমোব। কিন্তু তা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, অসময়়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।’’
তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, পরের দিন অর্থাৎ বুধবার সকাল দশটায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাঁদের রাতটুকু অপেক্ষা করতেই হবে। সেই কারণে পরিশ্রান্ত শরীরে, ক্লান্ত মনে ওই ছয় পরিযায়ী শ্রমিক হাসপাতালের বাইরেই গোটা রাত অপেক্ষা করতে থাকেন নীরোগ স্বাস্থ্যের রিপোর্ট হাতে বাড়ি ফেরার।
এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘রাত কাটাতে হয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। মশা মারার কয়েল জ্বালিয়ে।’’
অভিযুক্ত হাসপাতালের সুপার সৈকত বসু বলছেন, ‘‘ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা আমি জানি না। ওঁরা কখন এসেছেন, কারা তাঁদের বের করে দিয়েছেন, তা-ও জানি না। তবে স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা সকাল থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত হয়। যদি কেউ বিকেলের দিকে আসেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের নাম লিখে নিয়ে পরের দিন আসতে বলা হয়।’’
এই ব্যাখ্যা শোনার পরে ওই পথক্লান্ত, অভুক্ত অবস্থায় টানা দু’দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরা শ্রমিকেরা বলছেন, ‘‘যদি তা-ই হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের থাকার ব্যবস্থাটুকু অন্তত করা উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের! ওই অবস্থায় আমাদের কথা কেউ এক বার ভাবলেন না!’’
তেহট্টের মহকুমা শাসক অনীশ দাশগুপ্তকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর পর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy