মধ্যস্থতার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র।
আবারও বিএসএফের বিরুদ্ধে চাষিদের হয়রানির অভিযোগ উঠল জলঙ্গিতে। এবার কেবল হয়রানির অভিযোগ নয়, দাবি উঠেছে, হয়রানি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে বেধড়ক মার খেল জলঙ্গির ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় জলঙ্গির সীমান্তের গ্রাম ফরাজিপারা এলাকায়। পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে চাষিরা। যদিও পরবর্তীতে জলঙ্গি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। অন্যদিকে বিএসএফের অভিযোগ চাষিরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে বিএসএফের গাড়ি।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, সীমান্তে চাষিদের সঙ্গে বিএসএফের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর আগেও একাধিকবার ওই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু বিএসএফের ব্যাটালিয়ন বদল হলেই নতুন করে ফরমান জারি হয়। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হয় নতুন করে।
মূলত ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকায় এই সমস্যা প্রবল। কারণ ভাঙনের কারণে সীমান্ত থেকে বিএসএফ একটু একটু করে সরতে সরতে কোথাও পাঁচ কিমি কোথাও ছয় কিমি বা তারও বেশি ভেতরে এসে সীমান্ত তৈরি করেছে। কিন্তু এই বিস্তীর্ণ এলাকার জেগে ওঠা চরের মাঠে ভারতীয় চাষিদের হাজার হাজার একর জমি থাকার ফলে সেখানে নিয়মিত চাষের কাজে যেতে হয় চাষিদের। জলঙ্গির ফরাজিপারা ঘোষপাড়া এলাকার চাষিদের দাবি, প্রতিনিয়ত ফরাজিপারা ঘাট হয় চাষের কাজে চার থেকে পাঁচ হাজার জমির মালিক সহ শ্রমিক যাতায়াত করে। মূলত জমির মালিকরা তাদের সচিত্র পরিচয় পত্র দিয়ে এন্ট্রি করে লিখে দেন তাদের জমিতে কত জন শ্রমিক যাচ্ছে। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ এদিন বিএসএফের তরফে নতুন করে ফতোয়া জারি করা হয় কেবল মালিক নয়, প্রত্যেক শ্রমিককে সচিত্র পরিচয় পত্র সহ এন্ট্রি করতে হবে চরের মাঠে যাওয়ার সময়। আর এতেই বাধে বিপত্তি।এক জমির মালিক করিম মোল্লা বলছেন, "চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের এন্ট্রি করে চাষের কাজে যেতে গেলে দিন শেষ হয়ে যাবে সেখানেই। ফোনটা চলতে থাকলে চরের মাঠের চাষ করা বন্ধ হয়ে পড়বে আমাদের।"
এলাকার চাষি হাসানুজ্জামান বলছেন, "এতদিন যে নিয়ম ছিল সেটা হঠাৎ করেই বিএসএফ বৃহস্পতিবার বদলে দেয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই রক্তচক্ষু দেখায় বিএসএফের জওয়ানেরা। পরবর্তী সময়ে রাজ্য সড়কে এসে অবরোধ করে চাষিরা, সেখানেও বিএসএফের জওয়ানেরা এসে মারধর করে।’’ যদিও বিএসএফের দাবি, অবরোধের সময় তাদের একটি একটি গাড়ি ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। সেই সময় জনতার সঙ্গে বিএসএফের কিছুটা হাতাহাতি হয়েছে মাত্র। বিএসএফ কর্তার দাবি, ‘‘চাষের নামে অনেক সময় মানুষ পাচার হয়ে যায় এদেশ থেকে ওদেশে। ফলে আমরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সচিত্র পরিচয় পত্র সহ চাষের কাজে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম।’’ যদিও এই কাজ যে সহজ নয়, সেকথাও মেনে নিয়েছেন বিএসএফের ওই কর্তা। তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমরা উভয় সঙ্কটে আছি, একদিকে চাষিদের সমস্যা, অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়ছি।’’
জলঙ্গি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, "সীমান্ত এলাকার এই সমস্যায় আমরা জর্জরিত। প্রায় এই সমস্যা নিয়ে আমাদের এলাকায় ছুটে যেতে হচ্ছে, আলোচনায় বসতে হচ্ছে। একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে বিএসএফের চৌকি তৈরি না হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। তবে বিএসএফ এদিন কথা দিয়েছে, আগের নিয়মেই চাষি ও শ্রমিকরা চরের মাঠে যাবে আগামী দিন।’’
জলঙ্গির ঘোষ পাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বেবি নাসরিন বলছেন, ‘‘বিএসএফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার চাষিরা। বিএসএফ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফরমান জারি করে আর চাষিরা আমাদের কাছে এসে কান্নাকাটি করে। ভাঙনগ্রস্ত এলাকার মানুষের একমাত্র অবলম্বন চরের মাঠ। সেখানে যেতে না দিলে মানুষের পেটে লাথি মারা হবে, আমরা চাই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।
জলঙ্গির ওসি উৎপল দাস বলেন, ‘‘এদিনের ঘটনা নিয়ে উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy