প্রতীকী ছবি।
সরকারি উদ্যোগে সাড়ে তিন দিনের ট্রেন-যাত্রা কখনও বা দু’দিনের বাস-রাস্তা উজিয়ে গ্রামে ফিরেছেন তাঁরা। লকডাউনে মাসের পর মাস বন্দি থাকার পরে কেউ বা দূর-রাজ্য থেকেই পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে ভেসে পড়েছিলেন ঘরের টানে।
গত তিন সপ্তাহে পরিবারের টানে ঘরে ফেরা এমনই কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে বাড়ির চৌহদ্দিতেই থাকার নির্দেশ দিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে, দুই বা তিন সপ্তাহ— নিভৃতবাসের মেয়াদ যাই হোক, সে বিধির তোয়াক্কা করেননি তাঁদের সিংহভাগই। স্বাস্থ্য দফতরের কপালে ভাঁজ ফেলে তাঁরা পাড়া থেকে পড়শি গ্রাম, পায়ে হেঁটে কিংবা মোটরবাইকে দেদার ঘুরে বেড়িয়েছেন। গত এক সপ্তাহে জেলা জুড়ে ক্রমশ বেড়ে ওঠা কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা তার জেরেই যে হুহু করে বেড়ে গিয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না, মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। তবে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে অন্য একটু তথ্যও— দশ-বারো জনের প্রশস্থ সংসারে এক চিলতে চালা ঘরে তাঁদের ‘হোম কোয়রান্টিন’ হবেই বা কী করে! ফলে ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে না পেরেই তাঁরা পা ফেলেছেন বাড়ির বাইরে। এতে স্বাস্থ্যবিধি হয়ত ক্ষুণ্ণ হয়েছে, কিন্তু এ ছাড়া উপায়ই বা কী!
ডোমকলের একটি পঞ্চায়েতের প্রধান বলছেন, ‘‘এটা ঠিক যে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা অনেক সময়েই বিধি বেঙে পথে পা বাড়াচ্ছেন, কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভাবুন দেখি? একটা বা বড়জোর দু‘টি চৌখুপ্পি ঘরে গাদাগাদি করে দশ-বারোজনের পক্ষে থাকা সম্ভব?’’ নওদার এক পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, ‘‘এ একেবারে শাঁখের করাতের অবস্থা, ওঁদের না আছে বাইরে বেরনোর ছাড়পত্র না আছে বাড়িতে থাকার অবস্থা। ঘরে ফিরেও তাই যেন এক অন্ধকূপে পড়ে রয়েছেন ওঁরা!’’
যাঁরা ফিরেছেন পরিযায়ী সেই শ্রমিকদের বাড়ির বাইরে লাগানো হয়েছে হোম কোয়ারান্টিনের নোটিস। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই ঘরে নেই। দু-এক দিন ঘরে থাকার পরেই তাঁরা যে গ্রামের পথে পা বাড়িয়েছেন গ্রামবাসীরা তা জানিয়েছেন। অবাধে মেলামেশা করছেন স্বজনের সঙ্গেও। অনেককে স্বাভাবিক ছন্দে হাটে-বাজারেও দেখা যাচ্ছে। যার লক্ষণ ধরা পড়ছে জেলা-করোনা তালিকায়। ইতিমধ্যে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ ছুঁয়েছে। যার অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্য।
তবে, নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে বেশ কিছু জায়গায় গ্রামের বাসিন্দারাই নিয়েছেন উদ্যোগ। নওদার সর্বাঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দারাই নিজেদের উদ্যোগে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের স্থানীয় হাইস্কুলে আলাদা করে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে গত রবিবার রাতে জয়পুর থেকে বাসে গ্রামে ফিরেছেন ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের রেখেছেন সর্বাঙ্গপুর জনকল্যাণ সঙ্ঘ আদর্শ বিদ্যাপীঠে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করছেন গ্রামবাসীরাই। রাতভর নজরদারিও চালাচ্ছেন তাঁরা।
সর্বাঙ্গপুরের বাপ্পা মণ্ডল বলছেন, ‘‘যে হারে ভিনরাজ্য ফেরত শ্রমিকদের দেহে করোনার সংক্রমণ মিলছে, তাতে বড্ড উদ্বিগ্ন আমরা। গ্রামকে সুরক্ষিত রাখতেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’’ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিমাই পাল বলেন, ‘‘এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে। ফলে স্কুল বাড়িতে থাকা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে স্কুল খোলার আগে আস্ত স্কুলবাড়িটাই স্যানিটাইজেশন করতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy