Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Corruption

একশো দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্তে কমিটি

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কল্যাণীর মহকুমাশাসকের অফিসে কর্মরত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কাবেরি ঘোষের নেতৃত্বে ওই কমিটি ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার একপ্রস্ত তদন্তের কাজ শেষ করেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০৬:২১
Share: Save:

একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে বহু দিন ধরেই বিস্তর অভিযোগ উঠছিল। অভিযোগ, কল্যাণী ব্লকে একশো দিনের কাজের বহু স্কিমে ‘ভুয়ো শ্রমিকে’র অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়েছে। এ বার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। দিন কয়েক আগে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের তরফে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কল্যাণীর মহকুমাশাসকের অফিসে কর্মরত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কাবেরি ঘোষের নেতৃত্বে ওই কমিটি ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার একপ্রস্ত তদন্তের কাজ শেষ করেছে। চলতি মাসের ১৭ তারিখের মধ্যে কমিটিকে তদন্তের কাজ শেষ করতে হবে। আর ২২ জুলাই-এর মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট পেশ করতে হবে জেলা প্রশাসনের কাছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজে পুকুর কাটার মতো কাজ মূলত করে গ্রাম পঞ্চায়েত। কিন্তু গত অর্থবর্ষে দেখা যাচ্ছে, কল্যাণী ব্লকের পঞ্চায়েতগুলি সে ভাবে কাজ করেনি। শ্রম বাজেটের বড় অংশ খরচ করেছে ব্লক প্রশাসন। আর এটা করতেই ওই ব্লকের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া নিয়ে বিস্তর গরমিল ধরা পড়েছে। অভিযোগ, ২০১৯ সালের শেষের দিকে কল্যাণী ব্লকের চাঁদুরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দীপক মণ্ডলের জমিতে মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের মাধ্যমে পুকুর কাটার কাজ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ব্লক যে পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ করবে সেখানকার শ্রমিকদেরই পুকুর কাটার স্কিমে কাজ দিতে হবে। অভিযোগ, চাঁদুরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে যে স্কিমে পুকুর কাটা হয়েছে সেখানে এমন অনেক জব কার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে যাঁরা আদৌ চাঁদুরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাই নন। এমনকী তাঁরা কল্যাণী ব্লকের অন্য কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতেরও বাসিন্দা নন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কিমে মাটি কাটার দরুন ১১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৩৫ টাকা জবকার্ডধারীদের দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই রানাঘাট মহকুমার একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। এমনকি অনেকের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়েছে, যাঁরা নদিয়া জেলারই বাসিন্দা নন। ওই সব ভুয়ো উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডারে ব্লকের একাধিক কর্তা কেন সই করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ব্লক ও জেলা স্তরের একাধিক আধিকারিকের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। এ নিয়ে এক ঠিকাদার বলেন, ‘‘আমি যত দূর জেনেছি চাঁদুরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে চাকদহের এক ঠিকাদার। ওই ঠিকাদার ব্লকের কর্মী ও আধিকারিকদের সঙ্গে মিলে এই অপকর্ম ঘটিয়েছে।’’

এক সময়ে জেলার বিভিন্ন ব্লকে কাজ করেছেন এমন এক আধিকারিকের দাবি, এই ধরনের অন্যায় কাজ করতে বহু নেতা তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এ সব করেননি। এক শ্রেণির পদস্থ আধিকারিকদের প্রশয়ে এমন দুর্নীতি চলছে।

কল্যাণীর বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় মাস খানেক আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর তদন্ত কমিটির প্রধান কাবেরি ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও তদন্ত চলছে। ফলে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাবে না।’’ জেলার একশো দিনের কাজের নোডাল অফিসার সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘ওই ব্লকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা স্তরের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো নিরপেক্ষ ভাবে দক্ষ আধিকারিকেরা তদন্ত শুরু করেছেন। মঙ্গলবার তাঁরা তদন্তের একপ্রস্ত কাজ করেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption 100 Day Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE